‘আগে আমরা চার পাঁচজন সরিষা আবাদ করতাম। এখন অনেক মানুষ সরিষা চাষ করছে, প্রায় দেড়শ জনের মতো। আরও যারা আছেন এখন তারাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন সরিষা আবাদে।’
এমনটাই জানালেন নীলফামারী সদর উপজেলার কুন্দপুকুর ইউনিয়নের কাচারি পাড়ার সরিষা চাষি হারুন উর রশিদ।
তিনি এবার পাঁচ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। গতবার যেখানে করেছিলেন তিন বিঘা জমিতে।
কৃষক হারুন বলেন, ‘সরিষাতে খরচ চার হাজার টাকার মতো বিঘা প্রতি। ফলন ভালো হয়, দামও ভালো পাওয়া যায়। পাশাপাশি সরিষার টাকা দিয়ে বোরো আবাদ উঠি যায়। সরিষার কোনো কিছু ফেলানি যায় না, গাছ খড়ি এবং খৈল গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। অনেক লাভ সরিষাত।’
আরেক কৃষক আলমগীর ইসলাম বলেন, ‘আমন ও বোরো দুটি ধানই আমরা আবাদ করতাম বছরে। এখন তিনটি ফসল ফলাচ্ছি বছরে। আমন এবং বোরোর মাঝখানের তিন মাস জমি পতিত থাকত। কোনো আবাদ করতাম না। কৃষি বিভাগের পরামর্শে এই সময়ে সরিষা করছি।
‘সরিষায় খরচ কম। সেচ দিতে হয় না। সার কীটনাশকও তেমন প্রয়োজন হয় না। সরিষা এখন আমাদের পুরো গ্রাম ছড়িয়ে পড়েছে। এবার যারা আবাদ করেননি তারাও আগামীতে সরিষা আবাদ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’
আব্দুস ছামাদ নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘সরিষা গ্রামের চিত্র বদলে দিয়েছে। এলাকা পরিদর্শনে আসছেন কর্মকর্তাগণ। অনেকে আসছেন ছবি তুলতে।
‘আর ১৫ দিন পরই সরিষা কাটাই মাড়াই শুরু হবে। গতবার আবাদ একটু কম হলেও এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারও ভালো।’
সরেজমিনে কাচারি পাড়া এলাকা গিয়ে দেখা গেছে, ১৪০ জন কৃষক ৩০০ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করছেন। দুই বিঘা থেকে শুরু করে পাঁচ বিঘা পর্যন্ত সরিষা লাগিয়েছেন জমিতে।
সরকারি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় অনেকে পেয়েছেন সার ও বীজ। কৃষি বিভাগের পরামর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সরিষা করেছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগ কর্মকর্তারা বলছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণে সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয় কৃষকদের।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু তালেব বলেন, ‘বিঘা প্রতি ৫ মণ উৎপাদন হবে সরিষা, যেখানে চার হাজার টাকা মণ বিক্রি হবে। বিঘা প্রতি চার হাজার টাকা খরচ হয় একজন কৃষকের। বিপরীতে একজন কৃষকের ধানে বিঘা প্রতি লাভ আসে তিন হাজার টাকার মতো।’
কাচারী পাড়া ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রশিদুল ইসলাম জানান, কৃষকদের নিয়ে আলোচনা করে এবং পরামর্শ দিয়ে সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এতে আস্তে আস্তে চাষির সংখ্যা বাড়তে থাকে। এখন ১৪০ জন কৃষক সরিষা করছেন। এই গ্রাম এখন সরিষা গ্রামে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ করতে সরিষা আবাদের কোনো বিকল্প নেই এবং কোনো জমি পতিত রাখা যাবে না, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা সফল হয়েছি নীলফামারীতে।’
কুন্দপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ইউনিয়নের প্রতি পাড়া মহল্লায় আবাদ হয়েছে সরিষার। সরকারের প্রণোদনা সফল হয়েছে কৃষকরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন। দিন দিন চাষির সংখ্যা আরও বাড়বে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণে এগিয়ে এসেছেন এ এলাকার কৃষকরা। এখন আর পতিত থাকছে না কোনো জমি।’
আগামী তিন বছরের মধ্যে সরকারের দেয়া ভোজ্য তেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪০ ভাগ পূরণ করা হবে। ইতোমধ্যে শতকরা ১৪ ভাগ উৎপাদন হচ্ছে।
তিনি জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৬৭৭৭ হেক্টর জমিতে ৯১০০ টন সরিষায় ৩৬ লাখ ৪০ হাজার লিটার তেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।