রাজশাহীর গোদাগাড়ী সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে নদীপথে প্রতি মাসেই হেরোইন আনা হয় জানিয়ে র্যাব বলেছে, চক্রের নারী সদস্যদের মাধ্যমে সেসব মাদক পৌঁছানো হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও নওগাঁয় বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়ে ৫ কেজি ৪০০ গ্রাম হেরোইনসহ চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পাওয়ার কথা জানায় বাহিনীটি।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন শাকিবুর রহমান, তার স্ত্রী সেলিনা খাতুন ও শাকিবের সহযোগী রাজিয়া খাতুন।
চক্রের তিন সদস্যকে হেরোইনসহ গ্রেপ্তারের কথা জানায় র্যাব। ছবি: নিউজবাংলা
র্যাব জানায়, নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে প্রতিনিয়ত ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম করে মাদক সরবরাহ করত চক্রটি। প্রতিটি চালান পরিবহনের জন্য বহনকারীকে দেয়া হতো ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। মাদকের চালান বেশি থাকলে শাকিব নিজেই মোটরসাইকেলে তা পৌঁছে দিতেন। সাধারণত মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হেরোইন বিক্রির টাকা লেনদেন করা হতো।
সংবাদ সম্মেলনে কী জানানো হলো
তিনজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে র্যাব, যাতে বক্তব্য দেন বাহিনীর লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১২-এর অভিযানে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে প্রায় তিন কেজি হেরোইনসহ শাকিবুর ও রাজিয়াকে আটক করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নওগাঁয় শাকিবের বাসা থেকে ২ কেজির বেশি হেরোইনসহ তার স্ত্রী সেলিনাকে আটক করা হয়।
গ্রেপ্তার তিনজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, শাকিব এই চক্রের অন্যতম হোতা। ইতোপূর্বে তিনি চুরিতে জড়িত থাকলেও প্রায় ২ বছর ধরে মাদক কারবার চালিয়ে আসছিলেন।
তিনি জানান, শাকিব সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে হেরোইন সংগ্রহ করে প্রথমে নিজের বাড়িতে সংরক্ষণ করতেন। পরবর্তী সময়ে মাদকদ্রব্যটি চাহিদা অনুযায়ী বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করতেন।
র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, শাকিবের স্ত্রী সেলিনা স্বামীর মাদক কারবারের সহযোগী। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আনা হেরোইনের চালান প্রথমে শাকিব নিজ বাড়িতে তার স্ত্রীর কাছে রাখতেন। বিভিন্ন সময় আস্থাভাজন মাদক কারবারিরা বাড়িতে গেলে সেলিনা তাদের হেরোইন সরবরাহ করতেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শাকিবের মাদক চক্রের অন্যতম সহযোগী হিসেবে প্রায় ১ বছর ধরে কাজ করে আসছেন গ্রেপ্তার রাজিয়া, যিনি রাজশাহী, বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় হেরোইন সরবরাহ করতেন। এ ছাড়া কয়েকবার শাকিবের সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে বিভিন্ন স্থানে হেরোইন সরবরাহও করেছেন তিনি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার গাজীপুর ও সাভারের বিভিন্ন স্থানে হেরোইন সরবরাহের জন্য নওগাঁ থেকে শাকিবের সঙ্গে রওনা হন রাজিয়া। পথে গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় তাদের আটক করে র্যাব।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের কমান্ডার বলেন, এর আগে শাকিবের বিরুদ্ধে এলাকায় চুরির অভিযোগ থাকলেও এবারই প্রথম তিনি মাদকসহ আটক হয়েছেন। তিনিসহ চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে দেশের বাইরে মাদক পাঠানোর তথ্য পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত শাকিবের চক্রে ১০ থেকে ১২ জন জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে, যাদের অধিকাংশই নারী।