ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি ও ফুচকা উৎসবের নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’ আয়োজনের অভিযোগে করা আলাদা দুটি মামলায় প্রায় চার মাস কারাগারে থাকা রাজবাড়ীর মহিলা দলের নেত্রী সোনিয়া আক্তার স্মৃতি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
রাজবাড়ী জেলা কারাগার থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুক্তি পান তিনি।
মুক্তির পর স্মৃতি বলেন, ‘আমি সঠিক কথাই লিখেছিলাম। সত্যি কথা বলার অপরাধে চার মাস মাসুম দুটি বাচ্চা রেখে আমাকে জেল খাটতে হয়েছে। এতে আমার কোনো আফসোস নেই।
‘কারণ আমি জানি পুরো বাংলাদেশের মানুষ আমার পাশে ছিল। আর আমার দলের জন্য চার মাস কেন, চার বছরও জেল খাটতে পারি।’
স্মৃতি আরও বলেন, ‘একজন সমাজকর্মী হিসেবে মানুষের জন্য কাজ করি। রাত-বিরাতে মুমূর্ষু রোগীর জন্য বের হই; তাদের রক্ত জোগাড় করে দিই। এ জন্য অনেক খারাপ কথা শুনতে হয়েছে, কিন্তু যাদের উপকার হয়েছে, তাঁরা খুশি হয়েছেন।’
স্মৃতি রাজবাড়ী ব্লাড ডোনার্সের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি জেলা মহিলা দলের সদস্য। দুই সন্তানের এ জননী শহরের বেড়াডাঙ্গা এলাকায় থাকেন।
স্মৃতির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘আপত্তিকর’ পোস্টের বিষয়ে রাজবাড়ী সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন সামসুল আরেফিন চৌধুরী নামের আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতা। পরে অভিযোগটি মামলা হিসেবে ৫ অক্টোবর রেকর্ড করা হয়। ওই দিনই স্মৃতিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অভিযোগ অনুযায়ী, গত বছরের ৩১ আগস্ট স্মৃতি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি স্ট্যাটাস দেন, যাতে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যের সমালোচনা করে ‘আপত্তিকর’ কথা লেখেন। অনেকে পোস্টটি দেখায় প্রধানমন্ত্রীর সুনাম ক্ষুণ্ন ও মানহানি হয়।
মামলায় রাজবাড়ী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে বিফল হন স্মৃতি। এরপর ৩০ অক্টোবর হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। এর শুনানি নিয়ে ৩১ অক্টোবর তাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেয় হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে ২ নভেম্বর তার জামিন স্থগিত করে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
চেম্বার আদালত বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠায়। এর ধারাবাহিকতায় ২৮ নভেম্বর আপিল বিভাগে শুনানি হয়। পরে ১৫ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ স্মৃতিকে ছয় মাসের জামিন দেয়।
স্মৃতির বাবা আবদুস সাত্তার মল্লিক বলেন, ‘বাংলাদেশে জামিন হয়, কিন্তু মুক্তি মেলে না। আমার বাচ্চা আমার কাছে ফিরে এসেছে। আমার বুকের মানিক। আমার খুব ভালো লাগছে।’
রাজবাড়ী জেলা বারের আইনজীবী ও স্মৃতির মনোনীত আইনজীবী নেকবর হোসেন মনি জানান, বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তির মামলা ও ফেসবুক গ্রুপ ‘খাদক বাঙ্গালী’র আয়োজনে রাজবাড়ী শিশু পার্কে অশ্লীল নৃত্য আয়োজন করার অভিযোগে মামলায় জামিন পান স্মৃতি। সন্ধ্যায় জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি।
সোনিয়া আক্তার স্মৃতি জামিন পেলে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।