বাংলাদেশি ইমরান শরীফ ও জাপানি নারী নাকানো এরিকোর ছোট সন্তান নাকানো লায়লা লিনা (৯) আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক দিন মায়ের কাছে এবং আরেক দিন বাবার কাছে থাকবে বলে রায় দিয়েছে আদালত।
ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুই শিশুকে জাপানি মায়ের জিম্মায় রাখার যে রায় হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে বাবার আপিল শুনানি হবে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি। সে পর্যন্ত ছোট মেয়েটি এক দিন মায়ের কাছে এবং আরেক দিন বাবার কাছে থাকবে।
আদেশের আগে বিচারক বলেন, ‘লিনার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সে বাবার কাছে থাকতে চায়, না হয় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে যেতে চায়। সে মায়ের সাথে জাপানে যেতে চায়নি। তবে বলেনি যে, মায়ের কাছে থাকবে না। ’
এদিকে লিনা সাংবাদিকদের বলেছে, ‘আমি বাবাকে ভালোবাসি। বাংলাদেশে থাকতে চাই। মায়ের কাছে যাবো না।’
এর আগে ২৯ জানুয়ারি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের রায়ে বলা হয়, জাপানি নারী নাকানো এরিকোর জিম্মায় থাকবে তার দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা। একই সঙ্গে মেয়েদের নিয়ে জাপানেও যেতে পারবেন তিনি।
২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানের এরিকো ও বাংলাদেশি আমেরিকান শরীফ ইমরান বিয়ে করেন জাপানি আইন অনুযায়ী। এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বাসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন এরিকো। তারা হলো জেসমিন মালিকা, লাইলা লিনা ও সানিয়া হেনা। তাদের কন্যারা টোকিওর চফো সিটিতে আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসআইজে) শিক্ষার্থী ছিল।
২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরান বিয়েবিচ্ছেদের (ডিভোর্স) আবেদন করেন। ২১ জানুয়ারি ইমরান এএসআইজে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ মা এরিকোর সম্মতি না থাকায় তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। পরে ইমরান তার মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে তার সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি শিশুদের সঙ্গে পারিবারিকভাবে সাক্ষাতের আদেশ দেয়। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।
এরিকোর অভিযোগ, ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট নেন। পরে ২১ ফেব্রুয়ারি ইমরান তার দুই মেয়ে জেসমিন ও লাইলাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
এরপর মা এরিকো বাংলাদেশে এসে মামলা করেন এবং সন্তানের খোঁজ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। বিষয়টি গড়ায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ পর্যন্ত। আপিল বিভাগ ৩ মাসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন বিচারিক আদালতকে। মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর দুই কন্যাকে নিয়ে মা নাকানো এরিকো জাপানে যেতে চাইলে আটকে যান বিমানবন্দরে।
এ ঘটনায় ২৯ ডিসেম্বর বাবা ইমরান শরিফ ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিবের আদালতে মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।