বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সেতুর অভাবে দুর্ভোগে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ

  • প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ    
  • ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৬:১০

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলজিইডি মন্ত্রণালয়ের পল্লি সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণে সমীক্ষা প্রকল্পের পরিচালক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এবাদত আলী বলেন, ‘স্থানীয় প্রকৌশলী এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে আমি সেতু নির্মাণের এলাকা পরিদর্শন করে এসেছি। শুধু আশ্বাস নয়, দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘোড়াউত্রা নদীর উপর মাইজচর ও দিলালপুর সংযোগ সেতু নির্মিত হবে।’

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দুটি ইউনিয়নের ৫০ হাজারের বেশি মানুষের। সেতুর অভাবে হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও উপজেলা সদরে যেতে হলে নৌকাই একমাত্র ভরসা এখানকার বাসিন্দাদের। ফলে যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এ অঞ্চলের বাসিন্দারা।

উপজেলার মাইজচর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ঘোড়াউত্রা নদী পার হতে হয় ছোট ছোট নৌকা দিয়ে। বর্ষায় উত্তাল ঢেউয়ে অনেক সময় নৌকা ডুবে ঘটে দুর্ঘটনা আর শুকনো মৌসুমে কাঁদা-পানিতে ভিজে নৌকায় ওঠতে হয় তাদের।

এতে নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেতে পারে না শিক্ষার্থীরা। উৎপাদিত কৃষি পণ্যের সঠিক মূল্যও পাচ্ছে না কৃষক। চরম ভোগান্তি পোহায় কয়েকশ শিক্ষার্থীসহ ৫০ হাজারের বেশি মানুষের। উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র পথ এ নদী। এই নদী পার হয়েই শিক্ষার্থীদের যেতে হয় উচ্চ শিক্ষার জন্য। স্বাস্থ্য সেবা নিতে ও সরকারি-বেসরকারি অফিস এবং বাজারেও যেতে হয় একই পথে। উপজেলার মাইজচর ইউনিয়নের লোকজন পার হন দিলালপুর ঘাট দিয়ে।

এ ছাড়াও পাশ্ববর্তী হুমাইপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ প্রতিদিন এ ঘাট দিয়ে পার হন। বর্ষা মৌসুমে বাড়ির ঘাট থেকে নৌকায় উঠতে পারলেও শুকনো মৌসুমে প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে এসে নদী পার হতে হয় তাদের। জোয়ারের সময় নদীতে পানি বাড়লে ইঞ্জিনচালিত নৌকা তীরে ভিড়ে তবে পানি কমে গেলে বাধে বিপত্তি।

দিলালপুর আবদুল করিম উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী হেরা মনি বলেন, ‘বছরের অধিকাংশ সময় নদীতে অনেক পানি থাকে। এই সময়ে নদী পার হতে অনেক ভয় লাগে। অনেক সময় নৌকা দিয়ে নদী পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। শুকনো মৌসুমে পানি কমে গেলে নদী পার হতে গিয়ে কাঁদা লেপ্টে জামা কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। এই অবস্থায় ওইদিন আর স্কুলে যাওয়ার সুযোগ থাকে না।’

বাজিতপুর উপজেলা ছাত্রলীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জায়েদ উল্লাহ ফুরকান বলেন, ‘এই নদীতে সেতু না থাকায় সারা বছর আমাদের খুবই কষ্ট করতে হয়। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গেলে আমাদেরকেও এর অংশীদার করতে হবে। তাই সেতু নির্মাণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চাই।’

দিলালপুর আবদুল করিম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আ. কাইয়ুম জানান, মাইজচর ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। তারা প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে বিদ্যালয়ে আসে। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। ঘোড়াউত্রা নদীতে একটি সেতু নির্মিত হলে শিশুরাও বিদ্যালয়ে আসতে আগ্রহী হবে। ফলে পিছিয়ে থাকা এলাকাগুলোতেও শিক্ষার হার বাড়বে।

মাইজচর গ্রামের কৃষক হোসেন আলী বলেন, ‘এ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রচুর পরিমাণ সবজি উৎপাদন হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এখানকার কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য না পাওয়াতে সবজি উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। আমাদের বাপ-দাদার আমল থেকে হাজার হাজার মানুষ কষ্ট করছে। ঘোড়াউত্রা নদীতে একটি সেতু নির্মিত হলে কৃষকেরাও তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে। আমাদেরও কষ্ট দূর হবে।’

মাইজচর ইউনিয়নের বাসিন্দা জাহানারা বেগম বলেন, ‘একটা বিরিজের লাগি সারাডা জীবন কষ্ট কইরে গেলাম। অহনও করতাছি। বিরিজ আর অইলো না। আমরার দাবি এহানো একটা বিরিজ দরহার।’

নদী পার হওয়ার জন্য অপেক্ষারত মানুষেরা। ছবি: নিউজবাংলা

মাইজচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাবারক মিয়াজি বলেন, ‘উপজেলা সদর থেকে আমাদের ইউনিয়নটি একেবারেই বিচ্ছিন্ন। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এই নদীতে সেতু নির্মাণের দাবি থাকলেও সেতু নির্মাণ হয়নি। এ নদী পার হতে গিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়াও কেউ অসুস্থ হলে সময়মতো চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় নদী পার হওয়ার আগেই বিনা চিকিৎসায় মারা যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই অবস্থায় আমাদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য মো. আফজল হোসেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। কয়েকদিন আগে মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পরিচালক সেতু নির্মাণের এলাকা পরিদর্শন করেছেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলজিইডি মন্ত্রণালয়ের পল্লি সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণে সমীক্ষা প্রকল্পের পরিচালক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এবাদত আলী বলেন, ‘স্থানীয় প্রকৌশলী এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে আমি সেতু নির্মাণের এলাকা পরিদর্শন করে এসেছি। শুধু আশ্বাস নয়, দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘোড়াউত্রা নদীর উপর মাইজচর ও দিলালপুর সংযোগ সেতু নির্মিত হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর