জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপির পদত্যাগের কারণে শূন্য হওয়া ছয়টি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ভোটের আমেজ সবচেয়ে বেশি ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে। নানা কারণেই এ আসনে বিএনপির দলছুট নেতা আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার জয়ী হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। অবশেষে জয় পেলেন তিনিই।
বুধবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে এ তথ্য জানিয়েছে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিস। কলার ছড়া প্রতীকে ৪৪ হাজার ৮১৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আবদুস সাত্তার। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির আব্দুল হামিদ পেয়েছেন ৯৫৮১ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক বিএনপি নেতা আবু আসিফ আহমেদ পেয়েছেন ৩২৫৮ ভোট।
বিএনপির সিদ্ধান্ত মেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে পদত্যাগ করেও এই আসনে উপনির্বাচনে ভোটের মাঠ ছাড়েননি উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে তিনি লড়েন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।
সাত্তার ভূঁইয়া বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এই আসন থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একবার স্বতন্ত্রসহ তিনি ওই আসনের পাঁচবারের সংসদ সদস্য। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে তিনি পরাজিত হন।
ছয়বার নির্বাচন করে তিনি মাত্র একবার পরাজিত হন। তবে তার আবার নির্বচনে লড়ার সিদ্ধান্তে বিএনপির নেতা-কর্মীরাও বিস্মিত হন, ক্ষুব্ধ হন। তারা এই পদক্ষেপকে দেখছেন দলের সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গের প্রমাণ হিসেবে।
তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়ন সংগ্রহ থেকে শুরু করে সোমবার দুপুর ১২টা প্রচারণার শেষ সময় পর্যন্ত সাত্তারের নির্বাচন করাকে কেন্দ্র করে নানা চমক দেখেছে সাধারণ ভোটাররা। বিএনপির সাবেক এই নেতার পক্ষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা মরিয়া হয়ে মাঠে নেমে প্রকাশ্যে ভোট চাওয়ায় ভোটারদের মনে জেগে ওঠে নানা প্রশ্ন।
আওয়ামী লীগ আসনটিতে নৌকার প্রার্থী দেয়নি। তবে দলটি সমর্থিত তিন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপির সাবেক এই নেতাকে জেতাতে সেই তিন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। আবার প্রত্যাহার না করেও সাবেক সাংসদ জিয়াউল হক মৃধা এক বিবৃতিতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
হেভিওয়েট প্রতিদ্বন্দ্বীরা সরে দাঁড়ানোয় উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঞার জয়ের বিষয়টি এক প্রকার নিশ্চিতই হয়ে যায়। তবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন লাঙ্গল প্রতীকের আব্দুল হামিদ ভাসানী, গোলাপফুল মার্কা পাওয়া জহিরুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা আবু আসিফ।
নির্বাচনী সমীকরণ মিলিয়ে যখন ভোটাররা সাত্তারের বিপক্ষে কোনো হেভিওয়েট প্রার্থী পাচ্ছিলেন না তখনই প্রচার ও প্রসারে আলোচনায় আসেন আবু আসিফ। সাত্তারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতারা প্রচারণা চালালেও বিএনপির সাবেক নেতা আবু আসিফের প্রচারণায় দলের কোনো প্রভাবশালী নেতা ছিলেন না। অনুসারীদের নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে সাত্তারের বিপক্ষে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আসেন তিনি।
তবে সেখানে ছিল আরেক চমক। হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যান স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ। নির্বাচনে দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষসহ স্বজনরাও জানেন না তিনি কোথায় আছেন। প্রথমে কোনো অভিযোগ না দিলেও মঙ্গলবার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগ দেন আবু আসিফের স্ত্রী মেহেরুন্নিছা মেহরিন। এ ঘটনায় নতুন করে বিরূপ আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি হয়।
আবু আসিফ নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টিকে ক্ষমতাসীন দলের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে বিএনপি। তারা বলছে, উকিল সাত্তারের জয় নিশ্চিতে আসিফের ওপর চাপ ছিলো। তাই আসিফকে সরিয়ে ফেলে সাত্তারের পথ পরিষ্কার করতে চেয়েছে আওয়ামী লীগ।
এদিকে আবু আসিফ স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে গেছেন-এমন প্রচারও আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসিফের স্ত্রী ও বাসার দারোয়ানের একটি অডিও কথোপকথন ছড়িয়ে পড়ে, যা এমন প্রচারের পক্ষে হাওয়া দিচ্ছে। যদিও ওই অডিও টেপের বক্তাদের পরিচয় নিয়ে পুলিশও পুরোপুরি নিশ্চিত নয়।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, দলছুট নেতা উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়াকে জেতাতে আওয়ামী লীগের এমন মরিয়া হওয়ার কারণ বিএনপি ও ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। বিএনপিকে জনগণের কাছে বিতর্কিত করতে আওয়ামী লীগের এমন প্রয়াস বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী। তাছাড়া ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রেখেই সাত্তারের পক্ষে মরিয়া হয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে নামেন।