খুলনার ফুলতলা উপজেলায় দুর্বৃত্তের গুলিতে মিলন ফকির (৪৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
জামিরা রোডসংলগ্ন আইডিয়াল স্কুলের সামনে সোমবার সকাল ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
মিলন ওই উপজেলার আলকা গ্রামের আব্দুল ওহাব ফকিরের ছেলে।
উপজেলার সিকিরহাট ও রানাগাতি নদীর ঘাট ইজারার দ্বন্দ্বে মিলনকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের। গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারাও একই কথা বলেছেন।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত দুই বছরে ফুলতলায় মোট পাঁচটি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ওই পাঁচটির মধ্যে চারটি খুনেই চরমপন্থীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, সোমবার সকালে আইডিয়াল স্কুল মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মিলন। এ সময় একটি মোটরসাইকেলে করে দুজন দুর্বৃত্ত এসে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। মিলন দৌড়ে স্থানীয় একটি দোকানে ঢুকে পড়েন। দুর্বৃত্তরা ওই দোকানে ঢুকে তার মাথায় ও বুকে আবারও গুলি করে পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান মিলন।
যে দোকানে মিলন দৌড়ে প্রবেশ করেছিলেন সেটির স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল বলেন, ‘সকালে দোকানের মধ্যে এসে মাত্রই বসেছিলাম। এর মধ্যে শুনি যে মিলন গুলি খেয়েছে। তখন আমি গুলির শব্দ শুনে দোকানের মধ্যে শুয়ে পড়ি। পরে কে বা কারা মিলনকে গুলি করে পালিয়ে যায়।’মিলনকে হত্যার ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ফুলতলা থানায় মামলা হয়নি। কেন ওই হত্যাকাণ্ড, সে ব্যাপারে কথাও বলতে রাজি হননি থানার (ওসি) ইলিয়াস তালুকদার। তিনি বলেন, ‘কারণ তদন্ত না করে বলা যাবে না।’
সকালে মিলনের মরদেহ উদ্ধার করা হলেও দুপুরের পর ময়নাতদন্তের জন্য তা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
খুলনার ফুলতলা ও যশোরের অভয়নগরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ভৈরব নদ। ওই দুই উপজেলার মানুষ পারাপারে জন্য ব্যবহার করেন ১০টি খেয়াঘাট।
রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য বলেছে, এই খেয়াঘাটগুলো সরকারি ইজারা নিলেও ইজারাদারদের বার্ষিক চাঁদা পরিশোধ করতে হয় চরমপন্থী নেতাদের কাছে। তাদের কাছ থেকে অনুমতি না নিয়ে দরপত্র ক্রয় বা জমা দিলে তার পরিণতি খারাপ হয়।
ওই ১০টি খেয়াঘাটের মধ্যে সিকিরহাট ও রানাগাতি নদীর ঘাট ইজারা নিতে চেয়েছিলেন মিলন। দরপত্রও কিনেছিলেন। দুপুরে খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ে ওই দরপত্র জমা দেয়ার কথা ছিল।
মিলনের স্ত্রী রাশেদা বেগম বলেন, সিকিরহাট ও রানাগাতির ঘাট নিয়ে স্থানীয় এক সাবেক ইউপি সদস্যের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন মিলন। রোববার দুপুরে ওই ইউপি সদস্য তাকে (মিলন) একটি বড় মোরগ কিনে দিয়ে ঘাট ইজারার দরপত্র জমা না দিতে অনুরোধ করেন। এরপর সকালেই দুর্বৃত্তরা মিলনকে গুলি করে হত্যা করেছে।
রাশেদার অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলার জন্য ওই সাবেক ইউপি সদস্যের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়, তবে তিনি কল রিসিভ করেননি।
পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সন্দেহভাজন হিসেবে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই সাবেক ইউপি সদস্যকে থানায় আটকে রেখে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ফুলতলার চরমপন্থিরা দুই দলে বিভক্ত। এর মধ্যে একটি হলো নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি ও অন্যটি পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি। এর মধ্যে নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির ৩৫ জন সদস্য ইতিপূর্বে সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। তবে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যরা এখনও পলাতক। তারাই খেয়াঘাটগুলোর ইজারা নিয়ন্ত্রণ করে।
নিহত মিলন ফকির আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থী দল নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ফারুক হোসেন মোল্লার দুঃসম্পর্কের মামা। ওই দলের লোকদের সঙ্গে তার ওঠাবসা ছিল, তবে তিনি নিজে সরাসরি চরমপন্থি দলের সদস্য ছিলেন না।
সূত্রটি জানায়, নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে থেকে বিভিন্ন সময় খেয়াঘাটের ইজারা, নদীর বালু উত্তোলন ও ফুলতলা বাজার বণিক কল্যাণ সোসাইটির নির্বাচনে মিলনের হস্তক্ষেপ ছিল। এ নিয়ে দুই দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল।
পরিবারের সদস্যরা জানান, দীর্ঘদিন প্রবাসজীবন কাটিয়ে পাঁচ-সাত বছর আগে দেশে ফেরেন মিলন। দেশে এসে ফুলতলা বাজারে ব্যবসা শুরু করেন ও পরে আলকা গ্রামে বাড়ি করে বসবাস করতেন। ২০২১ সালে তিনি ফুলতলা বাজার বণিক কল্যাণ সোসাইটির সহসভাপতি পদেও নির্বাচন করেন।