ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে স্টেডিয়ামসহ বড় স্থাপনা নির্মাণে ১০ বছরে কাতারে কতজন বাংলাদেশি শ্রমিক নিহত হয়েছেন তার তালিকা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে এই সময়ে কতজন বাংলাদেশি শ্রমিক কাতারে নির্মাণ কাজে যুক্ত হয়েছেন এবং কতজন নিহত হয়েছেন তার তালিকা দাখিলে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানাতে রুল জারি করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, কাতারে বাংলাদেশ দূতাবাস, সুইজারল্যাণ্ডের জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন প্রধানকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
জনস্বার্থে দায়ের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেয়।
রিটকারী আইনজীবী মাসুদ রেজা সোবহান নিজেই আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আবুল কালাম খান (দাউদ)।
মাসুদ রেজা সোবহান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে স্টেডিয়ামসহ বড় বড় স্থাপনা নির্মাণের সময় বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের শ্রমিকের মৃত্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। ওই সংবাদ যুক্ত করে রিট দায়ের করি। আদালত শুনানি নিয়ে রুলসহ আদেশ দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘২০১০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কাতারে ১১টি স্টেডিয়াম, রাস্তা, হোটেল ও অন্যান্য অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে নির্মাণে যুক্ত অভিবাসী বাংলাদেশি নির্মাণ শ্রমিকের তালিকা তৈরি করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন আদালত।
‘একইসঙ্গে কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ কেন্দ্রিক নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে আনুমানিক সাড়ে চারশ’ অভিবাসী নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যুর যে অভিযোগ উঠেছে, তা সত্যি হলে এর মধ্যে বাংলাদেশের কতজন নির্মাণ শ্রমিক রয়েছেন, সে তথ্য সংগ্রহ করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি হতাহত বাংলাদেশি শ্রমিকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে রুল দিয়েছেন আদালত।’
পররাষ্ট্র সচিব, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, কাতারে বাংলাদেশ দূতাবাস, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন প্রধান, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), ফেডারেশন অফ ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ফিফা), কাতারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (ইন্টেরিয়র) ও শ্রমমন্ত্রীকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বিশ্বকাপ আয়োজনের গৌরব অর্জনের পর থেকে কাতারে প্রতি সপ্তাহে গড়ে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাকিস্তান বাদে ৪টি দেশে গার্ডিয়ানের নির্ভরযোগ্য সূত্র ও দেশগুলোর সরকারি হিসাবই বলছে—কাতারে ২০১১ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৫ হাজার ৯২৭ জন প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মৃত বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ১ হাজার ১৮ জন। কাতারে পাকিস্তানের দূতাবাস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে ৮২৪ জন পাকিস্তানি শ্রমিক মারা গেছেন মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশে।