চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) একটি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালককে মারধর করেছেন কয়েকজন ঠিকাদার। নগরের টাইগারপাসে চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ের চারতলায় রোববার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ঠিকাদাররা প্রকল্প পরিচালকের কক্ষের টেবিল ও বাইরের নামফলক ভাংচুর করেন।
চট্টগ্রাম সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, স্বচ্ছতার মাধ্যমে হওয়া টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কাজ না পেয়ে ঠিকাদাররা ওই হামলা চালিয়েছেন।
সূত্র বলছে, চট্টগ্রাম নগরীর সড়ক উন্নয়নে ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। এর মধ্যে এখন ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্টের (ইজিপি) মাধ্যমে ২২০ কোটি টাকার দরপত্র প্রক্রিয়ার মূল্যায়ন চলছে। নানা কারণে হামলাকারীরা সেই প্রক্রিয়ায় কাজ পাচ্ছেন না। তাতে ক্ষুব্ধ ছিলেন তারা।
হামলার শিকার মো. গোলাম ইয়াজদানী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী। তাকে গত বছরের ১৪ আগস্ট ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কসমূহ উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
চসিক সূত্র বলেছে, রোববার নগরের আন্দরকিল্লায় পুরোনো নগর ভবনে সাধারণ সভা হয়। সেই সভা শেষ করে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে টাইগারপাসে অস্থায়ী প্রধান কার্যালয়ে নিজের দপ্তরে আসেন প্রকল্প পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানী। তিনি দপ্তরে ঢোকার পর পরই ৮-১০ জন ঠিকাদার অনুমতি ছাড়াই তার কক্ষে ঢুকে তর্ক জুড়ে দেন। একপর্যায়ে তারা অতর্কিতভাবে প্রকল্প পরিচালকের ওপর হামলা চালান। ঠিকাদাররা তাকে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। অফিস সহকারী তিলক দে প্রকল্প পরিচালককে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করা হয়। হামলার পর দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন ওই ঠিকাদাররা।
রোববার সন্ধ্যায় প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, নামফলক ভেঙে ফেলা হয়েছে। কার্যালয়ের এখানে-ওখানে ভাঙা কাচ। এ সময় মো. গোলাম ইয়াজদানী বলেন, ‘আমি ঘটনার পর থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছি। এ নিয়ে এখন আর কথা বলতে চাচ্ছি না।’
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের প্রকল্প পরিচালককে মারধরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম সিটির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘হামলাকারী ঠিকাদারদের মধ্যে মো. সাহাবুদ্দিন, মো. ফেরদৌস, হাবিব, সুভাস, কঙ্কন, নাজিম ও ফিরোজ ছিলেন। এই সাতজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’
হামলার বিষয়ে রোববার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই অ্যাকশনে যাচ্ছি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে কারা ছিলেন। ছবি বের করছি। সাহাবুদ্দিন নামে একজনের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। স্বচ্ছতার মাধ্যমে কাজ দেয়া হচ্ছে। এখানে তো মামার বাড়ির কোনো আবদার নেই। নিয়ম অনুযায়ী যদি এই ঠিকাদাররা কাজ না পান আমাদের কী করার আছে? আমরা মামলা করব।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদার সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমি রোববার সিটি করপোরেশনে যাইনি। হামলার অভিযোগ সঠিক নয়।’