জামালপুরের একটি কবরস্থানের কবর খুঁড়ে একে একে অনেকগুলো কঙ্কাল চুরির অভিযোগ উঠেছে।
সদর উপজেলার ঘোড়াধাপ ইউনিয়নের ইদিলপুর গ্রামের কবরস্থানের এ ঘটনা নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে এলাকাজুড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইদিলপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান দেড় বছর আগে। তাকে বাড়ির কাছে ওই কবরস্থানে দাফন করা হয়। মাস খানেক আগে রাতের আঁধারে কবর খুঁড়ে কঙ্কালটি চুরি করে নিয়ে যায় চোর চক্র।
আজিজের ছেলে কৃষক আব্দুল হাকিম বলেন, ‘আমার বাবার কবর ছিল আমার শেষ স্মৃতি। এখন সেই কবরের লাশও চুরি হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে আসতাম, দোয়া করতাম। এখন সেটাও করতে পারি না।
‘আমার বাবার লাশ যারা চুরি করে নিয়ে গেছে। আমি তাদের বিচার চাই। এই দুঃখ কারে দেখাবো, এই দুঃখ দেখার কেউ নাই।’
প্রায় শত বছর আগে ৯০ শতাংশ জমির ওপর ইদিলপুর কবরস্থানটি নির্মাণ করে গ্রামবাসী। এখানে শায়িত আছেন ইদিলপুর গ্রামসহ আশে পাশের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের স্বজনরা।
গত এক মাসে এই কবরস্থান থেকে রাতের আঁধারে কবর খুঁড়ে অন্তত ১২টি কঙ্কাল চুরি হয়েছে বলে জানা গেছে। দুই বছরে এমন চুরির সংখ্যা শতাধিক বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
ইদিলপুর গ্রামের আরেক বাসিন্দা সেকান্দর আলী বলেন, ‘দুইটা বছর ধরে দেখছি কঙ্কাল চুরির ঘটনা ঘটছে। এক মাসে ১২ টা লাশ নিয়েছে চুরি কইরে। এটার কোনো বিচার কোনো খানে পাইতাছি না। আমরা কাকে বলবো? ’
আরেক বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এই গুরুস্থান থেকে লাশ চুরি হয় অনেকদিন যাবত। আমরা অতিষ্ঠ হয়ে গেছি লাশ চুরির জন্য। মরার পর যদি লাশ চুরি হয়ে যায়। তাহলে তো মরাও পাপ।’
কবরস্থানটিতে পালাক্রমে পাহারা দিয়েও কোনো সুফল পাচ্ছেন না স্থানীয়রা।
ইদিলপুর গ্রামের ৭০ বছর বয়সী ইয়াছিন আলী বলেন, ‘আমরা অনেক পাহারা দিয়েছি। কতক্ষণ পাহারা দিয়ে রাখা যায়? শীতের দিনেও কতক্ষণ পাহারা দেয়া যায়? রাস্তার সাথে কবরস্থান। সারা রাতই লোক চলাচল করে। ঘুরাফেরা করে। তবুও কঙ্কাল চুরি হচ্ছে।’
আরেক বাসিন্দা এমাল হক বলেন, ‘এগুলো তো আমরা সবসময় পাহারা দেই। আমরা গ্রামের মানুষ সবাই মিটিং করেছিলাম। এখন সবসময়তো কবরস্থানে থাকা যায় না। এই সুযোগটাই নিচ্ছে চোরেরা। আমরা এখন দেখি যে মইরেও শান্তি নাই।’
কবরস্থানের পাশে বসবাসকারী গোলাম আলী বলেন, ‘আমরা চোর ধরতে পারছি না। এই কারণে মামলা দিতে পারছি না। এখন যদি পুলিশে উদ্যোগ নেয় তাহলে আমরা পুলিশের সঙ্গে থাকবো।’
আব্দুল মান্নান নামে একজন বলেন, ‘এখান থেকে দুই বছর যাবত অনেক লাশ চুরি হয়ে গেছে। এখন আমরা কার নামে মামলা দেবো। কাউকে সন্দেহও করতে পারছি না।’
দোষীদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি স্থানীয়দের।
ইদিলপুর গ্রামের তরুণ আল আমিন হাসান রিয়াজ বলেন, ‘আমরা চাই, যারা এই জঘন্যতম অপরাধটা করছে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।’
ঘোড়াধাপ ইউনিয়ন পরষিদের চেয়ারম্যান মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘কবরস্থান থেকে কঙ্কাল চুরি হয়ে যায়। এটা আজকে নতুন না। প্রায়ই এগুলা হয়। এটার সঙ্গে বড় একটি সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে।
‘আমি মনে করি এটা থেকে যদি আমরা উত্তরণ চাই, তাহলে অবশ্যই সামাজিক বন্ধন লাগবে। সামাজিকভাবে চেষ্টার মাধ্যমে এটা থেকে উত্তরণ সম্ভব।’
এসব বিষযে নরুন্দি তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি কেউ। তবুও আমি আমার অফিসার দ্বারা এবং নিজেও তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করবো। যারা এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’