মাঝারি গাছের ডালে দোল খাচ্ছে বড় বড় সবুজ বেগুন। দূর থেকে দেখলে মনে হবে বেগুন গাছে লাউ ঝুলছে। এমন বেগুন চাষে আগ্রহ বাড়ছে কুমিল্লার কৃষকদের।
একটি বেগুনের ওজন ৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। আকারে বড়, নরম ও স্বাদে পুষ্টিমানে অনন্য বারি বেগুনের বাজার চাহিদা অনেক।
সরেজমিনে কুমিল্লা্র চান্দিনা উপজেলার বড় গোবিন্দপুর গিয়ে দেখা যায় বিস্তৃত জমিতে কাজ করছেন কৃষকরা। যতদূর চোখ যায় সবুজ আর সবুজ। তার মাঝে লাউ বেগুনের জমিতে চোখ আটকে যায় সবার।
কৃষক আমির হোসেন জানান, কৃষি অফিস থেকে বারি-১২ জাতের বেগুনের বীজ এনেছেন তিনি। ৩০ শতক জমিতে প্রথমবারের মত লাউ বেগুন চাষ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রতি কেজি বেগুন ৩৫-৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। বাজারে নিতে হয় না। গ্রাহকরা জমিতে এসেই বেগুন নিয়ে যায়৷’
লাউ বেগুন আকারে বড় এবং অনেক নরম। তাই পাখির প্রিয় খাবার এই লাউ বেগুন। এতে কৃষকরা চিন্তা করেন পাখির ঠোঁট থেকে কীভাবে তাদের লাউ বেগুনকে রক্ষা করবে।
কৃষক শাহজাহান ভূইয়া বলেন, ‘লাউ বেগুন খুব নরম বলে পাখি ও পোকামাকড়ের প্রিয় খাবার। তাই এ বেগুন রক্ষায় জাল দিয়ে পুরো জমি ঢেকে দিয়েছি। না হয় জমিতে বেগুন থাকবে না।’
চান্দিনা উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকতা গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘এই বেগুন প্রথমবার কুমিল্লায় চাষ শুরু হয়েছে। আমার এরিয়াতে কৃষকরা বেশ উদ্বুদ্ধ হয়েছে লাউ বেগুন চাষে। মাঠে এসে কৃষকদের সব সময় পরামর্শ দিচ্ছি কীভাবে পাখি ও কীটপতঙ্গ থেকে বেগুন রক্ষা করা যায়।’
চান্দিনা উপজেলা কৃষি কমকর্তা মনিরুল হক রোমেল বলেন, ‘আমরা প্রথমে ২০ গ্রাম বীজ থেকে চারা উৎপাদন করি। পাইলট প্রকল্প হিসেবে কয়েকজন কৃষককে বাছাই করি। কৃষি অফিসার ও কৃষকদের আন্তরিকতায় প্রথম বছরই ভালো ফলন হয়েছে। আমরা আশাকরি আগামী বছর আমরা পুরো উপজেলায় ছড়িয়ে পড়বে বারি-১২ জাতের এই বেগুন।’
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান জানান, এ বছর পুরো জেলায় দেড় হেক্টর জমিতে বারি ১২ জাতের বেগুন চাষ হয়েছে। এই বেগুন আকারে অনেক বড় হয়। প্রতিটা বেগুন ৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের হয়। এই বেগুনের টিস্যু অনেক নরম। খেতে সুস্বাদু। আশা করি আগামী বছর কুমিল্লায় সবজির একটা বড় অভাব পূরণ হবে বারি ১২ জাতের বেগুনে।
কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জ কাঁচা বাজারের তরকারী ব্যবসায়ী সোহেল মিয়া বলেন, ‘এত বড় বেগুন আগে দেখি নাই। খুব বড় এবং নরম। এ বেগুনের প্রচুর চাহিদা আছে বাজারে।’