চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নে ছয় বছর বয়সী শিশু নাবিল হোসেন ইমনকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে পলাতক আসামি মো. শাহজালাল হোসেন সোহাগকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে আদালত।
চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জান্নাতুল ফেরদৌস চৌধুরী সোমবার দুপুরে এ মামলার রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ২৬ বছর বয়সী মো. শাহাজালাল হোসেন সোহাগ বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের খাড়খাদিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
হত্যার শিকার শিশু নাবিল ওই ইউনিয়নের মদনের গাঁও গ্রামের মুন্সি বাড়ীর মো. মিজানুর রহমানের ছেলে এবং নাবিল স্থানীয় চান্দ্রা বাজার শিশু-কিশোর অ্যাকাডেমির প্লে গ্রুপের ছাত্র ছিল।
আসামির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী ২০০৩) এর ৭ ও ৮ ধারায় পৃথকভাবে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় প্রত্যেক ধারায় পৃথকভাবে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাস সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
এ ছাড়া দণ্ডবিধি ২০১ ধারায় তাকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর দুপুরে শিশু নাবিল স্কুল থেকে বাড়িতে ফেরার পথে আসামি সোহাগ তাকে অপহরণ করে চান্দ্রা বাজারে তার দোকানে নিয়ে যায়। দোকানে একটি কক্ষে শিশুকে আটকে রাখে এবং মোবাইল ফোনে শিশুর মার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে ওইদিনই তাকে গলায় প্লাস্টিক পেঁচিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরবর্তীতে শিশুটিকে কাগজের কার্টুনে বাজারের গলির ময়লার ডাস্টবিনে লুকিয়ে রাখে। শিশুকে খুঁজে না পেয়ে ওইদিনই শিশুর বাবা মিজানুর রহমান ফরিদগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেন।
এরপর ২ অক্টোবর বাজারের পরিচ্ছন্নকর্মীরা ডাস্টবিনে শিশু নাবিলের মরদেহ কার্টুন থেকে উদ্ধার করে পুলিশের নিকট হস্তান্তর করে। মুক্তিপণের টাকা দাবি করা মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে আসামি সোহাগকে ১৩ অক্টোবর গ্রেপ্তার করে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ। আসামির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডের আলামত উদ্ধার করা হয়।
ফরিদগঞ্জ থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আখতার হোসেন ঘটনাটি তদন্ত করে ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সাইয়েদুল ইসলাম বাবু জানান, মামলাটি দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর চলাকালীন সময়ে ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সাক্ষ্য প্রমাণ ও মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা শেষে বিচারক এই রায় দেন। তবে আসামি জামিনের পর পলাতক রয়েছে। তার অনুপস্থিতিতে এই রায় দেন বিচারক। আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট ইকবাল বিন বাশার।