বেসরকারি নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নাদিয়াকে চাপা দেয়া ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের বাসটির চালক মো. লিটন ও সহকারী আবুল খায়ের দুর্ঘটনার পর গাড়ি ফেলে পালিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বাহিনীটির ভাষ্য, সোমবার রাতে ঢাকার বাইরে পালানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। ঢাকা ছাড়ার আগেই বাড্ডা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চালক লিটনের বাড়ি ভোলা সদরের ইলিশায়। সহকারী আবুল খায়েরের বাড়ি একই জেলার সদরের বিদুরিয়া গ্রামে। দুজনই বাড্ডার আনন্দনগরে সার্জেন্ট টাওয়ারের পেছনে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. আবদুল আহাদ বলেন, ‘ঘটনার পরপরই পরিস্থিতি বুঝে বাস ফেলে পালিয়ে যান তারা। আশ্রয় নেন রাজধানীর বাড্ডায়। সেখান থেকে আজ সকালে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আজ (সোমবার) রাতেই আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে রাজধানী ছেড়ে ভোলা যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তারা।’
বনানীতে গুলশান জোনের ডিসি কার্যালয়ে সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আবদুল আহাদ আরও জানান, উত্তরা থেকে রোববার দুপুরে বাইকে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের প্রথম সেমিস্টারের ছাত্রী নাদিয়া। বাইকটি চালাচ্ছিলেন তার বন্ধু একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র মেহেদী হাসান। বেলা পৌনে ১টার দিকে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে ভিক্টর পরিবহনের দ্রুতগতির বাস বাইকটিকে ধাক্কা দেয়।
তিনি আরও জানান, আরোহী নাদিয়া রাস্তায় পড়ে গেলে তার মাথার ওপর দিয়ে বাসের চাকা যায়, যাতে ঘটনাস্থলেই ছাত্রীর মৃত্যু হয়। ঘটনার পরপরই বাসের চালক ও সহকারী দ্রুত পালিয়ে যান।
পুলিশ জানায়, ভাটারা থানা পুলিশ বাসটি জব্দ করে। সুরতহাল প্রতিবেদন রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে ময়নাতদন্ত শেষে ছাত্রীর মরদেহ বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নিহত নাদিয়া পটুয়াখালীর গলাচিপা পূর্ব নেটার জাহাঙ্গীর হোসেনের মেয়ে। রাজধানীর উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরে থাকতেন তিনি।
উপকমিশনার আবদুল আহাদ জানান, নাদিয়ার মৃত্যুর পর ভাটারা থানায় বাদী হয়ে নিরাপদ সড়ক আইনে মামলা করেন তার বাবা জাহাঙ্গীর। অন্যদিকে নাদিয়ার সহপাঠী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাসের চালক ও সহকারীকে গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম দেন।
তিনি বলেন, ‘চালক ও সহকারীকে গ্রেপ্তারে ভাটারা থানার ওসির নেতৃত্বে একাধিক টিম অভিযান শুরু করে। আমরা রাতেই সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে ঘাতক বাসকে শনাক্ত ও অভিযুক্ত বাসের চালক ও হেলপারকে শনাক্ত করা হয়।
‘আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে শাহ আলী থানাধীন প্রিয়াংকা হাউজিং হতে চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
রাজধানীতে বাসগুলো প্রতিযোগিতা করে চালানোর বিষয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘গুলশান ক্রাইম ও ট্রাফিক বিভাগসহ ডিএমপি সড়ক পরিবহন আইন মানার জন্য সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছে। আমরা যারা সাধারণ যাত্রী, পথচারী সড়কে চলাচল করব, তাদেরও আইন, নিয়মকানুন মানতে হবে, জানতে হবে। তদন্তে অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ‘আমরা আশ্বস্ত করেছিলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামি ধরব। আমরা সেটাতে সক্ষম হয়েছি।’
সুপ্রভাত বাস নাম বদল করে হয়েছে ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহন। ভিক্টরের মতো সুপ্রভাত বাসের চালকও চাপা দিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গুলশান জোনের ডিসি বলেন, ‘আমার জানা নাই। গ্রেপ্তার আসামিদের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হচ্ছে। রিমান্ডে পেলে জিজ্ঞাসাবাদে এসব কিছু জানতে চাওয়া হবে।’