বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভেজালে বাজার মন্দা মাদারীপুরের পাটালি গুড়ের

  • প্রতিনিধি, মাদারীপুর    
  • ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩ ১২:২১

জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘মাদারীপুর জেলার ব্র্যান্ডিং হচ্ছে খেজুর গুড়। তাই ঐতিহ্য আর সুনাম ফিরিয়ে আনার জন্য নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রতি উপজেলায় বিনামূল্যে খেজুর চারা বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া গাছিরা যাতে উৎসাহ পায়, সেজন্য গাছিদের প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে।’

এক একটি খণ্ড এক কেজি থেকে পাঁচ কেজি পর্যন্ত। দেখলে মনে হয় একটি মধুখণ্ড। মাদারীপুরের সেই চিরচেনা পাটালি গুড়ের ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। গত কয়েক দশক ধরে ব্যাপক সুখ্যাতি থাকলেও বর্তমানে ভেজালের কারণে সেই সুনাম নেই বললেই চলে। এতে কমেছে পাটালি গুড়ের কদর। ফলে কেনা-বেচাতে এসেছে ভাটা। অনেক ব্যবসায়ী চলে যাচ্ছেন ভিন্ন পেশায়। অন্যদিকে প্রশাসন জেলার ব্র্যান্ডিং পাটালি গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে নিয়েছেন নানা উদ্যোগ।

মাদারীপুর শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের পাঁচখোলা ইউনিয়নের জাফরাবাদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খুব ভোরে আলোর ফোটার সঙ্গে সঙ্গে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে ব্যস্ত লোকমান শিকদার ও তার ছেলে আল আমীন। এক একটি গাছ থেকে আধা হাড়ি রস পাচ্ছেন। সেই রস চুলায় ঢেলে রস থেকে গুড় তৈরিতে লেগে পড়েন তার স্ত্রী আমেনা খাতুন। এক থেকে দেড় ঘণ্টা জ্বালানোর পরে রস লাল হয়ে গুড়ে তৈরি হয়। সেই গুড় আপন মনে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তৈরি করে গুড়ের লালি। সেই লালি গুড় ছোট বড় মাটির পাত্রে ঢেলে তৈরি করে এক থেকে পাঁচ কেজি পর্যন্ত গুড়ের খণ্ড। এ সময় কথা হয় লোকমান শিকদারের সঙ্গে।

লোকমান শিকদার বলেন, ‘প্রতি বছর কার্তিকের শেষ থেকে ফাল্গুনের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত খেজুর গুড়ের মৌসুম। এ মৌসুমে খেজুর গুড়ের মৌ মৌ গন্ধে পাওয়া যেত। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে গরম গুড়ের পাটালি ও লালি গুড়ের লোভনীয় স্বাদ ভোলার নয়। কিন্তু পারিপার্শ্বিক নানা কারণ ও যান্ত্রিক সভ্যতার যাতাকলে পড়ে একশ্রেণীর মানুষের ভেজালের কারণে ধ্বংস হতে শুরু করেছে সেই ঐতিহ্য। যে কারণে ভেজালমুক্ত গুড় এখন আর আশা করা যায় না।’

তার ছেলে আল আমীন বাবার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন, ‘ভেজালের কবলে পড়ে মাদারীপুর জেলার খেজুর গুড় তার নিজস্ব ঐতিহ্য খোয়াতে বসেছে। দিন দিন মুনাফাখোর ও অসাধু গুড় উৎপাদনকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠায় গুড়ের হারানো ঐতিহ্য আর ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। তাই আমরা কয়েকটি পরিবার কোনোরকমে টিকে আছি। আগামীতে হয়তো আমরাও টিকে থাকতে পারব না।’

ভোজন রসিক এসএম আরাফাত শরীফ বলেন, ‘ভেজাল গুড়ে এখন হাট-বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। গুড়ের ওজন বৃদ্ধি করতে চিনি আর রং ফর্সা করতে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত কেমিক্যাল। যে কারণে সুস্বাদু খেজুর গুড় এখন দুর্লভ হয়ে পড়েছে। গত ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে এ অবস্থা চলে আসলেও নেয়া হয়নি আইনি ব্যবস্থা। তাই গুড় বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের আগের মতো ব্যবসা নেই। ফলে অনেকেই চলে গেছে অন্য পেশায়। আমরাও বঞ্চিত হচ্ছি মধুখণ্ড পাটালি গুড় থেকে।’

ভেজালের কারণে মাদারীপুরের পাটালি গুড়ের বাজার মন্দা । ছবি: নিউজবাংলা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক দিগ্বিজয় হাজরার জানান, মাদারীপুর জেলার ব্র্যান্ডিং পাটালি গুড়ের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে কৃষি অফিস থেকেও নেয়া হয়েছে নানান উদ্যোগ। সেই সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।

তিনি আরও বলেন, ‘যারা ভেজাল গুড় তৈরি করে, তাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের সহযোগিতায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা কৃষি অফিস থেকেও কৃষকদের ভেজাল গুড় উৎপাদন করতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। যদি কেউ অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয়, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

আবহমান বাংলার পৌষ পার্বণের উৎসব আর শীতের পিঠা, পায়েস ও লোকখাদ্যের কথা যেন ভুলতেই বসেছে বাঙালিরা। প্রতি বছর জেলায় অন্তত তিন থেকে চার কোটি টাকার গুড় বিক্রি হয় বলে দাবি গুড় ব্যবসায়ীদের । তাই তো নির্ভেজাল গুড়ের স্বাদ ও গন্ধ আগের মতো পাইতে খেজুর গাছ ও গাছির সংখ্যা বাড়ানোর কথা জানালেন জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন।

জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘মাদারীপুর জেলার ব্র্যান্ডিং হচ্ছে খেজুর গুড়। তাই ঐতিহ্য আর সুনাম ফিরিয়ে আনার জন্য নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রতি উপজেলায় বিনামূল্যে খেজুর চারা বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া গাছিরা যাতে উৎসাহ পায়, সেজন্য গাছিদের প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর