যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় থাকা জাহাজে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য পাঠানোটা অপ্রত্যাশিত বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। রাশিয়ার এমন আচরণে ‘তাজ্জব’ হয়েছেন বলেও জানান তিনি।
রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
ড. মোমেন বলেন, ‘রাশিয়ার তো হাজার হাজার জাহাজ রয়েছে। আমরা রাশিয়াকে বলেছি নিষেধাজ্ঞা থাকা ৬৯টি জাহাজ বাদ দিয়ে অন্য জাহাজে উপকরণ পাঠাতে। নিষেধাজ্ঞা আছে এমন জাহাজ আমরা গ্রহণ করতে চাই না।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সুসম্পর্ক রয়েছে। আমার কাছে খুব তাজ্জব লেগেছে, রাশিয়া জেনেশুনে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা একটি জাহাজ পাঠিয়েছে। আমরা এটা আশা করিনি। আমরা প্রত্যাশা করি, এখন থেকে নিষেধাজ্ঞা নেই এমন জাহাজে করে মালামাল পাঠাবে রাশিয়া।’
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পণ্য পাঠানোর বিষয়ে রাশিয়া পরবর্তীতে কোনো বার্তা দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে কাজ চলছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়ন কাজ কীভাবে আরও ভালো সমন্বয় করা যায় সে বিষয়ে মস্কোর সঙ্গে কাজ করছে ঢাকা।’
রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের মালামাল নিয়ে এসেছিল নিষেধাজ্ঞা থাকা রুশ জাহাজটি। ফাইল ছবি
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
রাশিয়ার জাহাজ ফেরত পাঠানোকে কেন্দ্র করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য আনা নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা তৈরি হতে যাচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটু দেরি তো হবেই। এটুকু বলতে পারি, নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে ওই জাহাজকে বাংলাদেশে আসতে দেয়া হয়নি।’
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘ওই জাহাজের পণ্য ভারতে খালাসের কথা বলা হচ্ছে। এরকম বার্তা আমাদের কাছে ছিল না। এটা একটা কমার্শিয়াল ট্রানজেকশন। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হলো আমাদের কাছে মালামাল পৌঁছে দেয়া এবং আশা করি সেটা হবে। এটা বাস্তবায়নের দায়িত্বে যারা আছেন, তারা বিষয়টি দেখবেন।’
নিষেধাজ্ঞা থাকা জাহাজ পাঠানো নিয়ে মস্কোর কাছে ঢাকা কোনো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কিনা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা আমার পুরোপুরি জানা নেই। তবে প্রত্যাশা করি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় নিশ্চয়ই সেটা জানিয়েছে। তারা বিষয়টি ডিল করছে।’
‘উরসা মেজর’ নামে রাশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজটি গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য নিয়ে মোংলা বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ নিশ্চিত হয় যে রঙ ও নাম বদল করে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা রাশিয়ার একটি জাহাজ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য নিয়ে আসছে।
২০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জানায়, ওই জাহাজটি আসলে ‘উরসা মেজর’ নয়, তাদের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ‘স্পার্টা থ্রি’। সেটি রং ও নাম পাল্টে পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে আসছে।
পরে বাংলাদেশ জাহাজটিকে বন্দরে ভিড়তে নিষেধ করে। যদিও জাহাজটিকে বন্দরে পণ্য খালাসের অনুমতি দিতে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করে রাশিয়া। তবে এ বিষয়ে অনড় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ।
এ অবস্থায় জাহাজটি ভারতের যেকোনো বন্দরে পণ্য খালাস করে পরে তা অন্য জাহাজে করে বাংলাদেশে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু জাহাজটি প্রায় দুই সপ্তাহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পণ্য খালাসের জন্য অপেক্ষা করে ব্যর্থ হয়। পরে জাহাজটি ওই পণ্য নিয়ে রাশিয়ায় ফিরে যায়।