‘ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্কসহ রাজধানীর পার্কগুলো বাণিজ্যিক মাফিয়াদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। কিছুসংখ্যক মুনফাখোর ইজারার নামে কিছু টাকার বিনিময়ে পার্কগুলোকে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে ব্যবহার করছে। আড়ালে আরও অবৈধ টাকা নিয়ে এগুলোকে আস্তে আস্তে গ্রাস করছে তারা। এ অবস্থায় নগরবাসীর শ্বাস নেয়ার জায়গাটুকুও থাকছে না।’
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ শনিবার এক সুধী সমাবেশে এসব কথা বলেন।
পুরান ঢাকার সদরঘাটে বাহাদুর শাহ পার্ক মুক্তমঞ্চে এই সমাবেশের আয়োজন করে ‘ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদ’।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘বাহাদুর শাহ পার্ক ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের একটি স্মৃতিবিজড়িত স্থান; যাকে বাংলার প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বলা হয়। অনেক স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীকে এখানে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। এমন ঐতিহাসিক স্থানে এভাবে বাণিজ্যিক ভবন ও রেস্তোরাঁ নির্মাণ করে অপমান করা হচ্ছে। রক্ষার বদলে গ্রাস করা হচ্ছে। পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা শহরে খুব বেশি পার্ক নেই। মানুষ ঠিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারে না। পুরান ঢাকার মানুষ বাহাদুর শাহ পার্কে এসে একটু শ্বাস নেয়। সেটাও এখন দখল করে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এখন মানুষকে সামান্য খোলা জায়গার জন্য, ছোট একটা পার্ক রক্ষার জন্য আন্দোলন করতে হয়। এই পার্ক যেটা দীর্ঘদিনের ঐতিহাসিক একটা স্থান, সেটাও এখন মুনাফাখোরদের ভয়ংকর আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে।’
মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পার্ক সংরক্ষণে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন এই কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে সবাই একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে। আমরা সবার সঙ্গে আছি।
সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ বলেন, ‘আমরা দেখছি সরকার এখন ব্যবসায়ী বান্ধব। জনগণের কথা ভাবে না। সব জায়গায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাতে হবে তাদের। পার্কের চারপাশের ফুটপাত, রাস্তায় সিটি করপোরেশন দোকান বসিয়ে টাকা আয় করছে। পার্কেও স্থায়ী খাবারের দোকান বসিয়েছে। সেখানে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে দেশের বিদ্যুতের অপচয় করছে। পার্কের পরিবেশ নষ্ট করছে। গাছ রং করে, বাতি লাগিয়ে, পার্কে চুলা জ্বালিয়ে গাছগুলোকে মেরে ফেলছে। এটা বন্ধ করতে হবে। ঢাকাবাসী এটা মেনে নেবে না।’
আদি ঢাকা সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি বাবু রাম ঘোষ বলেন, ‘পার্কবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের শুরুর পর থেকেই আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। মেয়রকেও একাধিকবার জানিয়েছি। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পার্ক রক্ষায় এমন কার্যক্রম যাতে না ঘটে তা তিনি দেখবেন। কিন্তু উল্টোটা হচ্ছে। এই কর্মকাণ্ড বন্ধ করা না হলে আদি ঢাকা সাংস্কৃতিক জোটের সঙ্গে আরও ৬০টি সংগঠনকে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদ-এর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান।
সদস্য সচিব আক্তারুজ্জামান খানের সঞ্চালনায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মানজার হোসেন সুইট, লেখক কৌশিক আহমেদ, সাবেক ছাত্রনেতা আতিকুল ইসলামসহ অনেক শিক্ষক, সমাজকর্মী ও সংগ্রাম পরিষদের নেতারা সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন।