বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে শুক্রবার দেশের বৃহত্তম জুমার জামাতে অংশ নিতে গাজীপুর ও আশপাশের এলাকা থেকে ময়দানে এসেছেন বিপুলসংখ্যক মুসল্লি।
সকাল থেকে দলে দলে আসা মুসল্লিরা দুপুর দেড়টায় ময়দান ও আশপাশের এলাকায় জুমার নামাজ পড়বেন, যাতে ইমামতি করবেন তাবলিগ জামাতের একটি পক্ষের মুরব্বি মাওলানা সা’দ কান্ধলভির বড় ছেলে ইউসুফ বিন সা’দ কান্ধলভি।
কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের মতো এক দিন আগেই শুরু হয় ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। শুক্রবার ভোররাতে ফজরের নামাজের পর পাকিস্তানের মাওলানা ওসমানের বয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।
বিদেশি মেহমান ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা এ পর্বে অংশ নেন।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের মিডিয়া সমন্বয়ক মো. সায়েম জানান, জুমায় কয়েক লাখ মুসল্লি এক জামাতে শরিক হয়ে নামাজ পড়বেন। রাজধানী ও গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলা এবং আশপাশের জেলা থেকে অনেক মুসল্লি এ নামাজে শরিক হবেন। রাতেই অনেকে টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় স্বজনের বাসায় অবস্থান নেন।
জুমার নামাজে বাড়তি মুসল্লির কথা মাথায় রেখে আলাদা ট্রাফিক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মহানগর ট্রাফিক বিভাগ।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস সড়ক থেকে আব্দুল্লাহপুর ও কামারপাড়া সড়ক থেকে মীরেরবাজার সড়ক পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাক, লরি ডাইভারশন করা হয়েছে।
গাড়িগুলো ইজতেমাস্থল পরিহার করে বিকল্প সড়কে চলাচল করবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) আলমগীর হোসেন।
জুমার জামাতে অংশ নিতে অনেক মুসল্লি বিভিন্ন পরিবহনে করে টঙ্গীতে আসেন। পরিবহন সংকটে অনেকে হেঁটেই আসেন তুরাগতীরে।
মিরপুর এলাকার বাসিন্দা মোরসালিন প্রতি বছরই ইজতেমায় আসেন। এবার শারীরিক অসুস্থতায় মূল ইজতেমায় আসতে না পারলেও ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বৃহত্তম জামাতে অংশ নিতে টঙ্গীর উদ্দেশে রওনা হয়ে পৌঁছান সকালে।
শেরপুর থেকে টঙ্গীতে আসা আবদুল মান্নান জানান, তার এলাকা থেকে ইজতেমায় জামাত এসেছে। সেখানে মুসল্লিরা নির্দিষ্ট খিত্তায় অবস্থান করছেন, যাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি একত্রে জুমার নামাজ আদায় করতে ময়দানে এসেছেন।
কালিয়াকৈর এলাকার পোশাক কারখানার কর্মকর্তা আনিসুল ইসলাম বলেন, আরও দুই কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার ফজর নামাজ শেষে ইজতেমা ময়দানের উদ্দেশে রওনা হয়ে ভোরেই পৌঁছান।
চলছে বয়ান
ভোর থেকেই ইজতেমা ময়দানে চলছে ধর্মীয় বয়ান। মূল বয়ান মঞ্চ থেকে জ্যেষ্ঠ মুরব্বিরা আগত মুসল্লিদের উদ্দেশে বিভিন্ন ভাষায় আল্লাহ ও তার রাসুলের নির্দেশিত ইসলামী বিধানের ওপর দিক নির্দেশনামূলক গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করছেন।
আগত মুসল্লিরা ৮৫টি খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ভোর থেকে বয়ান শুনছেন। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বিদেশ থেকে আসা ৫ হাজার মুসল্লি।
ইসলামের বিধান, ইমান, আহকাম, দাওয়াত বিষয়ে মুসল্লিদের উদ্দেশে চলছে এ বয়ান। সভাপতিবিহীন এই ধর্মীয় সম্মলন তাবলিগ জামাতের শুরা সদস্যদের মাধ্যমে পরিচালনা হয়ে আসছে।
মুসল্লিদের জন্য ব্যবস্থা
ইজতেমায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার লক্ষ্যে গৃহীত নানা ব্যবস্থা জোরদার করার কথা বলছে প্রশাসন। মুসল্লিদের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন মিয়া বলেন, মুসল্লিদের অজু, গোসলের সুবিধার্থে ১৬টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩১টি টয়লেট বিল্ডিংয়ের মাধ্যমে টয়লেট সুবিধা দেয়া হয়েছে।
এক মুসল্লির মৃত্যু
এবারের ইজতেমায় বার্ধক্যজনিত কারণে আগত এক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকালে ইজতেমা ময়দানে তার জানাজা হয়েছে।
৭৫ বছর বয়সী মফিজুল ইসলামের বাড়ি বরগুনায়, যার মৃত্যু হয় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে।
কার বয়ান কখন
ইজতেমার মুরব্বি ও মিডিয়ার সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম বলেন, শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ময়দানে কয়েকটি আলাদা আলাদা মজমা (প্রাগ্রাম) শুরু হয়। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের আলাদা জোড় হবে। এ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তা ও শিক্ষক এবং চিকিৎসক ও প্রকৌশলীদের আলাদা জোড় হবে। এই মজমাগুলো আলাদা স্পটে হবে। এগুলোতে নিজামুদ্দিনের মুরব্বিরা বয়ান করবেন।
বয়ানের উদ্দেশ্য হলো যেসব নতুন ছাত্র, শিক্ষক ও চিকিৎসক মজমায় আসেন, তারা যাতে নিজের জীবন ইসলাম অনুযায়ী পরিচালনা করেন।
সকালে পাকিস্তানের মাওলানা ওসমান আম বয়ান করেন। তরজমা করেন মুফতি জিয়া বিন কাসেম।
জুমার পর সংক্ষিপ্ত বয়ান করবেন কাকরাইলের শুরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম। আসরের পর বয়ান করবেন মাওলানা সা’দের মেজো ছেলে মাওলানা সাইদ বিন সা’দ কান্ধলভি। এ ছাড়া মাগরিবের পর বয়ান করবেন মাওলানা ইউসুফ বিন সা’দ কান্ধলভি।
মাওলানা সা’দ অনুসারী মুসল্লিদের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে রোববার শেষ হবে ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা।