সরিষা ক্ষেতের আইল ধরে হাঁটছিলেন ভারসাম্যহীন এক নারী। হঠাৎ করেই তিনি ঢলে পড়েন সরিষার জমিতে। বিষয়টি টের পেয়ে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে ফুটফুটে এক শিশু কন্যার জন্ম হয়। পাগলিটা মা হলো, তবে বাবা কে তা জানা গেল না।
পরে স্থানীয়রা সেই নারীসহ নবজাতককে নিয়ে যায় হাসপাতালে। হাসপাতাল থেকে নবজাতক শিশুকে রেখে সেদিন সন্ধ্যায় উধাও হয়ে যায় ভারসাম্যহীন সেই মা।
এরপরেই স্থানীয়দের মধ্যে শিশুর মালিকানা নিয়ে শুরু হয় বিবাদ। কেউ বলে ওই নারীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছি, তার চিকিৎসার সরঞ্জাম দিয়েছি; সেজন্য এ নবজাতক তার। আবার কেউ বলে আমি প্রথম দেখেছি নবজাতকটি আমার। যে জমিতে নবজাতকটি জন্মগ্রহণ করে সেই জমির মালিকও নবজাতকের দাবি জানান।
এভাবে তর্কাতর্কির পরে শুরু হয় দর-কষাকষি৷ দাম ৫০ হাজার, এক লাখ তারপর গিয়ে থামে দেড় লাখে।
কুমিল্লা সদর দক্ষিন উপজেলার গলিয়ারা উত্তর ইউনিয়নের ভূমি অফিস সংলগ্ন এলাকায় সোমবারে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়।
এমন চাঞ্চল্যকর সংবাদটি পৌঁছে যায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শুভাশিস ঘোস বিষয়টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শুভাশিস ঘোষ বলেন, ‘সেদিন ঘটনা শুনে আমি ও থানার ওসি দেবাশীষ চৌধুরী মিলে মেডিক্যাল টিম ও উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সদস্যদের নিয়ে হাজির হই কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
‘বৃহস্পতিবার দুপুরে যখন আমরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উপস্থিত হই ততক্ষণে বেশ কয়েকজন দম্পতি হাজির। আমরা যখন আইনি বিষয়গুলো বলে ওই নবজাতকে অ্যাম্বুলেন্সে শিশু সদনে নেয়ার প্রস্তুতি নেই তখন এক দম্পতি কান্না শুরু করেন। যেকোন কিছুর বিনিময়ে তারা নবজাতকের মা-বাবা হতে চান।’
তিনি আরও জানান, ওই দম্পতির বিয়ের ১৭ বছর হলেও কোনো সন্তান হয়না। তাই তারা এ নবজাতককে তাদের সন্তান হিসেবে নিতে চায়। গত দুদিন তারা হাসপাতালে এসে নতুন জামাসহ নবজাতকের জন্য যা দরকার সব নিয়ে এসেছেন। বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে ওই দম্পতির হাতে কন্যাটিকে তুলে দেয়া হয়। নাম দেয়া হয় জয়ীতা।
শুভাশিস বলেন, ‘ওই দম্পতির পরিচয় প্রকাশ করতে চাই না। তবে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে এবং প্রতি তিন মাস পরপর উপজেলায় হাজির হওয়ার শর্ত আরোপ করি। মেয়ের বয়স ১৮ হওয়া পর্যন্ত এই শর্ত তারা মানবে বলে স্বীকার করে।’
ইউএনও আরও বলেন, ‘আমরা যখন নবজাতকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিঃস্তান দম্পতির হাতে তুলে দেই তখন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্জ্ব গোলাম সারোয়ারসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় এক আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণা হয়।’