উত্তরের কনকনে শীতে কাঁপছে কুড়িগ্রাম। দুর্বিষহ জীবন কাটলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পাশে না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন শীতার্ত দরিদ্ররা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বরাদ্দ স্বল্প এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে দায়ী করছেন জনপ্রতিনিধিরা।
সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের বাসিন্দা মকবুল মিয়া জানান, এই যে শীত পড়ছে আজ পর্যন্ত কোনো মেম্বার, চেয়ারম্যান, এমপি শীতবস্ত্র বিতরণ করেননি। যা দিয়েছে সরকারিভাবেই। মাঝেমধ্যে কিছু সংগঠন বিভিন্ন জায়গায় শীতবস্ত্র দিলেও জনপ্রতিনিধিরা তাদের নাম ভাংগায়।
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা সেলিম বলেন, ‘চরের মানুষের দুর্ভোগ বেশি। দিনে-রাতে সমানভাবে বাতাস বয়ে যাচ্ছে। হিম বাতাসের কারণে কামলা দেয়া যায় না। আয়-রোজগারও কমে গেছে। চাল, ডাল, নুন, তরকারি কিনতে টাকা শেষ। শীতের কাপড় চোপড় কিনবো কি দিয়ে। পুরান যা আছে তা দিয়েই হামরা (আমরা) শীত কাটাচ্ছি।’
নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা ইউনিয়নের জিল্লুর রহমান জানান, ভূরুঙ্গামারী থেকে হিমালয় কাছাকাছি হওয়ায় এই অঞ্চলে শীতের প্রভাব অনেক বেশি থাকে। প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে ঘর থেকে বের হওয়া মুশকিল।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলার চর ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের বাসিন্দা করিমন বেগম বলেন, ‘সকাল থেকে সূর্যের কোনো দেখা নাই। কনকনে শীতে শিশু আর বৃদ্ধদের খুব কষ্ট হইছে। মেম্বার, চেয়ারম্যানের তো দেখা নাই। আর এমপিকে তো মুই (আমি) চিনি না। খালি ভোট আসলে ওদের দেখা পাওয়া যায়। এ ছাড়া আর গরিবের কে খোঁজ থোয় (নেয়) ।’
নাগেশ্বরীর কেদার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আ.খ.ম. ওয়াজিদুল কবির রাশেদ শীতার্ত মানুষের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘শীতার্ত মানুষের সংখ্যা অনুযায়ী সরকারি বরাদ্দ কম হওয়ায় অভিযোগের তীর জনপ্রতিনিধিদের দিকে বেশি। আমরা জনপ্রতিনিধিরাও শীতবস্ত্র কিনে সরকারি বরাদ্দের সঙ্গে বিতরণ করছি। কিন্তু গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার শীত বেশি হওয়ায় মানুষের চাহিদাটাও বেশি।’
রাজারহাট চাকিরপশার ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জানান, সরকারি বরাদ্দকৃত শীতবস্ত্রের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও শীতবস্ত্র দেয়া হচ্ছে। তবে জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতি কারণে মানুষের শীতবস্ত্র নেবার সংখ্যা বেড়েছে। শীত মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি বিত্তবান ও এনজিওদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক সাইদুল আরীফ জানান, সরকারিভাবে বিতরণকৃত শীতবস্ত্রের হিসেব থাকলেও বেসরকারি বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে শীতবস্ত্র বিতরণের হিসেব না থাকায় সঠিক তথ্য ওঠে আসছে না। আগামীতে শীতবস্ত্র বিতরণে সমন্বয় করার প্রতি জোর দেবেন তিনি।
তিনি আরও জানান, কুড়িগ্রামে শীতার্ত মানুষের জন্য এক লাখ কম্বলের চাহিদা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৫১ হাজার কম্বল যা বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও শীতবস্ত্র ক্রয়ের জন্য নয় উপজেলায় দুই লাখ করে ১৮লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।