ময়মনসিংহে বিশ্বখ্যাত ল্যাম্বরগিনি অ্যাভেন্টেডর এলপি-৭০০ মডেলের মতো দেখতে স্পোর্টস কার তৈরি করে রীতিমতো হৈচৈ ফেলেছেন এক ব্যক্তি। হলুদ রংয়ের আকর্ষণীয় গাড়িটি দেখতে উৎসুক মানুষের আগ্রহের সীমা নেই। প্রতিদিন ভিড় করছেন নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন।
ময়মনসিংহ নগরীর মাসকান্দা এলাকায় শাহাদত মোটর ওয়ার্কশপে শ্রমিকের কাজ করেন আবদুল আজিজ। তার বাড়ি জামালপুরের বকশিগঞ্জের নিলক্ষ্মীয়া ইউনিয়নের জাকনিপুর গ্রামে। আড়াই দশক ধরে মোটর ওয়ার্কশপে কাজ করছেন তিনি।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নগরীর মাসকান্দা এলাকায় শাহাদত মোটর ওয়ার্কশপের সামনে শোভা পাচ্ছে স্পোর্টস কারটি।
আনোয়ার হোসেন নামের দর্শনার্থী জানান, বাংলাদেশে স্পোর্টস কার তৈরি কল্পনারও অতীত। কিন্তু সেই অসাধ্যকে সাধ্য করেছেন গ্যারেজ মিস্ত্রি। ঘটনাটি জানতে পেরে গাড়ি দেখতে এসেছেন তিনি। মেধা আর ইচ্ছেশক্তি দ্বারা স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব, এটি প্রমাণ করেছেন আজিজ।
ফরহাদ মিয়া নামের আরেক দর্শনার্থী জানান, ভালুকার হবিরবাড়ী ইউনিয়ন থেকে কয়েকজন বন্ধু মিলে গাড়িটি দেখতে এসেছেন। এ ধরনের গাড়ি টিভিতেই দেখেছেন কিন্তু বাস্তবে এত সুন্দর গাড়ি সত্যিই মুগ্ধ হওয়ার মতো।
গাড়িটি তৈরিতে আজিজকে সহযোগিতা করা আরাফাত বলেন, ‘গ্যারেজের মিস্ত্রি হিসেবে আমার কাজ করার অভিজ্ঞতা ১৭ বছর। এ পর্যন্ত অসংখ্য গাড়ি মেরামতের কাজ করেছি। প্রথমবারের মতো এ ধরনের গাড়ি তৈরির অভিজ্ঞতা হয়েছে। এতে নিজের কাছেও অনেক ভালো লাগছে।’
ল্যাম্বরগিনির আদলে গাড়ি নির্মাতা আবদুল আজিজ জানান, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে মোটর ওয়ার্কশপে কাজ করেন তিনি। ঢাকায় ২১ বছর কাজ করার পর গত ৪ বছর ধরে ময়মনসিংহের ওই ওয়ার্কশপে কাজ করছেন। মোবাইল ফোনে বিশ্বখ্যাত স্পোর্টস কার ল্যাম্বরগিনি অ্যাভেন্টেডর এলপি-৭০০ দেখে মাথায় চিন্তা আসে স্পোর্টস কার তৈরি করার। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে এমন গাড়ি তৈরির চেষ্টা শুরু করেন।
তিনি আরও জানান, ওই বছরই টয়োটা স্টারলেট পুরোনো গাড়ি সংগ্রহ করেন। সেই গাড়ির বাইরের অংশ বাদ দিয়ে ল্যাম্বরগিনি অ্যাভেন্টেডর এলপি-৭০০ মডেলের আদলে নান্দনিক ডিজাইনে গড়ে তুলতে পুরোদমে কাজ শুরু করেন তিনি। এরপর দীর্ঘ ১৫ মাসের চেষ্টায় তৈরি হয় হলুদ রংয়ের ১৫০০ সিসি গাড়িটি। যা চলতে পারে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে।
আজিজ বলেন, ‘১১ লাখ টাকা ব্যাংক লোনসহ মোট ১৫ লাখ টাকা খরচ করে স্বপ্নের গাড়িটি বাস্তবে রূপ দিয়েছি। হেডলাইট, টেইল লাইট, বডি ডিজাইন, সিটের গঠন ঠিক ল্যাম্বরগিনি অ্যাভেন্টেডর এলপি-৭০০ মডেলের গাড়ির মতোই। আসল ল্যাম্বরগিনির মতো গাড়ির দরজাগুলোও খুলে ওঠে যায় ওপরের দিকে। গাড়িটির বাহ্যিক দিকের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হলেও ভেতরে এখনও কিছু কাজ বাকি রয়েছে।’
আজিজ আরও বলেন, ‘দীর্ঘ ১৫ মাস পরিশ্রম করে গাড়িটি তৈরি করেছি। সড়কে গাড়িটি চলাচলের জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি। সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেলে নিজস্ব নকশায় আরও স্পোর্টস কার তৈরি করতে চাই।’