অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর অবশেষে বদলি করা হয়েছে ময়মনসিংহের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমানকে। তাকে ফেনী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পাঠানো হয়েছে।
হাফিজুর রহমানের পদে পদায়ন করা হয়েছে বরিশাল বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের উপপরিচালক মো. শাহাদাৎ হোসেনকে।
সোমবার সকালে ময়মনসিংহের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে বিদায় নেন হাফিজুর রহমান। এর আগে ১০ জানুয়ারি ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) শাহ মুহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে বদলি করা হয়।
উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান গত বছরের ১৪ অক্টোবর ময়মসিংহে যোগ দেন। এরপর কার্যালয়ের সামনে বড় করে প্যানা টানিয়ে দেন তিনি। তাতে লেখা হয়, ‘আপনার পাশে আমরা। পাসপোর্ট করতে এসে কোনো ধরনের ভোগান্তি সৃষ্টি হলে ২০৬ নম্বর কক্ষে সরাসরি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’
ঘুষ আর নানা অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হওয়া ময়মনসিংহের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটি নয়া উপ-পরিচালকের নির্দেশে স্বচ্ছ হয়েছে বলে প্রচার করেন কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের দাবি, এখানে দালালের মাধ্যমে ঘুষ দিয়ে আর পাসপোর্ট করতে হয় না। দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এমন প্রচারের সত্যতা খুঁজতে গত বছরের মার্চ মাসে টানা ১৫ দিন অনুসন্ধান করে নিউজবাংলা। ওই বছরের ২ এপ্রিল ‘কৃতিত্ব নিলেন পাসপোর্ট কর্মকর্তা, বন্ধ হয়নি ঘুষ-দালালি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে নিউজবাংলা। প্রকাশিত প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয় ময়মনসিংহ পাসপোর্ট অফিসে অনিয়ম-দুর্নীতির আদ্যোপান্ত।
এর কয়েক মাস পরই প্রধান কার্যালয়ে বদলি হয়ে চলে যান অফিস সহকারী শফি। কিন্তু তাতে উপ-পরিচালকের টনক নড়েনি। চেয়ারে শক্তপোক্তভাবে বসে থেকে তিনি কতিপয় সাংবাদিক দিয়ে তার পক্ষে একের পর এক স্তূতিমূলক সংবাদ প্রকাশ করিয়েছেন।
এরপর দৈনিক শেয়ারবিজ পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি রবিউল আওয়াল রবিকে লাঞ্ছিত করে আবারও আলোচনায় আসেন হাফিজুর রহমান।
এ ঘটনায় গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর ‘অনিয়ম নয়, সাংবাদিক ঠেকাতে মরিয়া কর্মকর্তা’ শিরোনামে আবারও সংবাদ প্রকাশ করে নিউজবাংলা। সে সময়ও অনুসন্ধানে তুলে ধরা হয় পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা হাফিছুর রহমানের অনিয়ম-দুর্নীতির নানা গোপন তথ্য। তবে এসব ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বরাবরই অস্বীকার করে পাশ কাটিয়ে গেছেন এই উপ-পরিচালক।
জেলার হালুয়াঘাটের বিলডোরা গ্রামের মাজহারুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বছরের নভেম্বরে ১০ বছরের জন্য পাসপোর্ট জরুরিভাবে পেতে ৮ হাজার ৫০ টাকা দিয়ে অনলাইনে আবেদন করেছিলাম। নিজে আবেদন জমা দিতে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। পরে ইশারায় একজন দালাল ডাক দিলে তার সঙ্গে আলোচনা করে তাকে আরও নগদ আড়াই হাজার টাকা দিয়েছি। এরপর ৬ ডিসেম্বর পাসপোর্ট হাতে পেয়েছি।’
লাঞ্ছনার শিকার সাংবাদিক রবিউল আওয়াল রবি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওইদিনের ঘটনা আমি আজও ভুলতে পারিনি। অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ হবে বুঝতে পেরে উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান আমাকে অপদস্ত করে কক্ষ থেকে বের করে দেন। একইসঙ্গে তিনি বলে দেন, আমাকে আর পাসপোর্ট অফিসে ঢুকতে দেয়া হবে না। এমন উপ-পরিচালক এর আগে কখনোই দেখিনি। উনি হচ্ছেন উপরে ঠিকঠাক, ভেতরে সদরঘাট।’
নতুন কর্মস্থলে যোগদানের বিষয়ে জানতে উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমানের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সরকারি চাকরি করলে বদলি হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে স্যার অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন কিনা আমার জানা নেই। অনেক সেবাগ্রহীতা সরাসরি স্যারের কক্ষে যাওয়ার সুযোগ পেতেন। তার সময়ে দালালের সংখ্যা কমেছে।’