বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিবিসি বাজারের সেই রেডিওটা…

  •    
  • ১৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ১২:২৭

দীর্ঘ ৮১ বছর পর গত ৩১ ডিসেম্বর রাতে বিবিসি বাংলার রেডিও সম্প্রচারে ইতি টানা হয়। ওই রাতে সর্বশেষ প্রচার করা হয় বাংলা ভাষার শ্রোতাদের জন্য শেষ দুটি অধিবেশন।

বিবিসি বাংলার রেডিও সম্প্রচার বন্ধে হতাশা নেমে এসেছে পাবনার ঐতিহাসিক বিবিসি বাজারের মানুষের মাঝে। মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোতে এই বাজারে কাশেম মোল্লার একটি রেডিওতে শোনা যেত বিবিসি বাংলার খবর। এক পর্যায়ে তা পরিচিত পায় বিবিসি বাজার নামে।

এ বাজার ও সেই রেডিওর সঙ্গে জড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের আবেগময় স্মৃতি। তাই বিবিসি বাংলার রেডিও সম্প্রচার পুনরায় চালুর পাশপাশি স্মৃতিবিজড়িত রেডিওসহ যুদ্ধের নানা স্মৃতি সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

দীর্ঘ ৮১ বছর পর গত ৩১ ডিসেম্বর রাতে বিবিসি বাংলার রেডিও সম্প্রচারে ইতি টানা হয়। ওই রাতে সর্বশেষ প্রচার করা হয় বাংলা ভাষার শ্রোতাদের জন্য শেষ দুটি অধিবেশন।

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশে প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিবিসি বাজারটির বিস্তৃতি।

স্থানীয়রা জানান, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোতে যুদ্ধের খবর প্রচারে ছিলো পাকিস্তানি শাসকদের নিষেধাজ্ঞা। ঈশ্বরদীর পাকশী ইউনিয়নের মুক্তিকামী জনতা দেশের পরিস্থিতি জানতে ছুটে আসতেন রূপপুরের চা দোকানি কাশেম মোল্লার দোকানে।

তিন ব্রান্ডের ফিলিপস রেডিওটিতে বিবিসি বাংলায় বাজতো মুক্তিযুদ্ধের খবর, ভিড় করতেন আশেপাশের গ্রামের শত শত মানুষ। আর তা থেকেই মানুষের মুখে মুখে রূপপুরের এই বাজারের নাম হয় বিবিসি বাজার।

মুক্তিযোদ্ধা রশিদুল্লাহ জানান, রূপপুরসহ আশেপাশের গ্রামের মানুষকে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব গাঁথা শোনানোর অপরাধে পাকিস্তানী সেনাদের নির্যাতনে মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে গিয়েছিলেণ কাশেম মোল্লা। তবু মুক্তিবার্তা শোনাতে পিছু হটেননি তিনি। রূপপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তাই বিবিসি বাজার আর কাশেম মোল্লার রেডিও পরম আবেগের নাম।

মুক্তিযোদ্ধা ও পাকশী ইউনিয়ন কমান্ড কাউন্সিল কামন্ডার জাহাঙ্গীর আলম জানান, একাত্তরে পাবনার পাকশী পেপার মিলস, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকায় পাকবাহিনীরা ক্যাম্প বসালে সাধারণের মানুষের বাজার করা কঠিন হয়ে পড়ে। পাকিস্তানি মিলিটারির ভয়ে মানুষ সেখানে যেতে পারত না।

তিনি জানান, ওই সময় সেখানে কাশেম মোল্লার মুদি দোকান ছিল। পাকবাহিনীর দেয়া আগুনে সেই দোকান পুড়ে গেলে তিনি পাকশী ছেড়ে রূপপুর এলাকায় চলে আসেন। তুলনামূলক উঁচু একটি জায়গায় রাস্তার ধারে একটি চা দোকান দেন তিনি।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কাশেম মোল্লার একটা থ্রি ব্যান্ডের রেডিও ছিল। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা তখন ভারতে ট্রেনিং নিচ্ছি, সুযোগ বুঝে দেশে ঢুকে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে নানা অপারেশন চালাচ্ছি। সারা দেশেই তখন এমন সফল অপারেশনগুলো হতে শুরু করেছে। কিন্তু রেডিও পাকিস্তানে এসব খবর পড়া হত না।

‘ফলে আমাদের এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা আর সাধারণ মানুষের কাছে ভরসার নাম হয়ে ওঠে কাশেম মোল্লার ওই ফিলিপস ব্র্যান্ডের থ্রি ব্যান্ডের রেডিও। মুক্তিযুদ্ধের পরে ধীরে ধীরে কাশেম মোল্লার দোকানের পাশে আরও দোকান বাড়তে থাকে। মানুষ আসার সময় বলত, বিবিসি শুনতে যাই, বিবিসির বাজারে যাই। এভাবে বলতে বলতে একটা সময় এই বাজারের নামই হয়ে যায় বিবিসি বাজার।’

২০১৫ সালে মারা গেছেন কাশেম মোল্লা। আর ৩১ ডিসেম্বর থেকে বন্ধ হয়েছে বিবিসি বাংলার রেডিও সম্প্রচার। এতে ভীষণ মন খারাপ বিবিসি বাজারের মানুষের।

কাশেম মোল্লার ছোট ভাই আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘একদিন বিকেলবেলা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী গ্রামে চলে আসে। তারা দোকানে ঢোকার আগেই বড় ভাই চিন্তা করেছেন যে, রেডিও যদি পাক আর্মিদের হাতে চলে যায়, তাহলে আমরা এই খবরগুলো এই অঞ্চলের মানুষকে শোনাতে পারব না।

‘তখন রেডিওটাকে রক্ষা করার জন্য গোপনে জঙ্গলের মধ্যে ফেলে দেন। আমরা একাত্তরে কষ্ট করে যুদ্ধ করেছি, এটা ঠিক। কিন্তু কাশেম মোল্লা জীবন বাজি রেখে বিবিসির সংবাদের মাধ্যমে নানা রকম তথ্য দিয়ে উনি যুদ্ধ করেছেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি তিনি পাননি।’

কাশেম মোল্লার ঐতিহাসিক রেডিও ও নানা স্বীকৃতি স্মারক এখনও আঁকড়ে আছে পরিবার। মুক্তিযুদ্ধে কাশেম মোল্লা ও রূপপুরবাসীর সাহসিকতার গল্প নতুন প্রজন্মকে জানাতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ দরকার বলে মনে করেন তারা। একই সঙ্গে বিবিসি বাংলার রেডিও সম্প্রচার পুনরায় চালু ও স্মৃতি সংরক্ষণে স্থায়ী উদ্যোগ গ্রহণের দাবি রূপপুরের মানুষের।

কাশেম মোল্লার ছেলে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বাবার ঐতিহাসিক রেডিওটি আমরা যত্ম করে নিজেদের কাছে রেখেছি। এখন নতুন প্রজন্মের অনেকেই বিবিসি বাজারের ইতিহাস জানে না।

‘যেহেতু বাংলা ভাষার জন্য লড়াইকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করেছে। তার প্রতি সম্মান জানিয়ে বিবিসি বাংলা রেডিও সম্প্রচার পুণরায় চালু করবে বলে আমরা আশা করি। একই সঙ্গে বিবিসি বাজারে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সংগ্রহশালা গড়ে তোলার দাবি জানাই।’

এ বিভাগের আরো খবর