ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে প্রায় প্রতিদিনই চুরি হচ্ছে। হাসপাতালের বিভিন্ন সরঞ্জামসহ চুরি হচ্ছে রোগীদের টাকা ও মোবাইল। হাসপাতালে বর্তমানে নেই কোনো নিরাপত্তারক্ষী। এ কারণে চুরি ঠেকাতে পারছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ দিকে ৬টি চুরির ঘটনায় ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। বাকিগুলো ছোটখাটো চুরি বলে পুলিশকে জানানো হয়নি। একবার চোরকে হাতেনাতে ধরে পুলিশেও দেয়া হয়েছে। এরপরও চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না।
ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানান, হাসপাতালে চুরি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চোরের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনেরাও। চুরি হচ্ছে হাসপাতালের বিদ্যুতের তামার তার, এসির তামার তার, লোহার পাইপ, এমন কি জানালার থাই গ্লাসও।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা গণেশ কুমার আগারওয়ালা জানান, জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী একটি বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার মাধ্যমে মাসিক ২২ হাজার টাকার চুক্তিতে তিনজন নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অচিরেই এটি কার্যকর করা হবে। এর মধ্যে একজন প্রহরী দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং দুজন রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন।
নিরাপত্তা প্রহরীরা কাজ শুরু করলে চুরির প্রবণতা অনেক কমে যাবে বলে আশা করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, এ ক্ষেত্রে হাসপাতালের কোনো বাজেট নেই। হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাঁদার টাকায় নিরাপত্তা প্রহরীদের বেতন দেয়া হবে।
ফরিদপুর পৌরসভার পাশে মুজিব সড়কের উত্তর দিকে অবস্থিত ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯১৭ সালে। জেলায় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থাকলেও দূরত্বের কারণে শহরের বাসিন্দাদের অনেকেই চিকিৎসাসেবা নিতে জেনারেল হাসপাতালে আসেন।
হাসপাতালটিতে মোট তিনটি প্রবেশপথ। এর মধ্যে মুজিব সড়কের পূর্ব ও পশ্চিমে দুটি প্রধান ফটক রয়েছে। আরেকটি প্রবেশপথ উত্তর-পশ্চিম কোণে হাসপাতালের মসজিদ সংলগ্ন এলাকায়। হাসপাতালে যে সীমানা প্রাচীর রয়েছে, এর উচ্চতা মাত্র ৪ ফুট। ফলে হাসপাতালের ফটকের বাইরে, বিশেষত ফরিদপুর পৌরসভা ও জেনারেল হাসপাতালের মধ্যের অংশটুকু সড়কের পাশে হওয়ায় অবাধে সীমানা প্রাচীর টপকে ভেতরে প্রবেশ করা যায়। চোরদের আসা-যাওয়ার পথও মূলত এই অংশ।
হাসপাতালের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত বিকাল ৩টা থেকে ৪টা এবং রাত ১টা থেকে ৩টার মধ্যে চুরির ঘটনাগুলো ঘটে। এ সময়সীমার মধ্যে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে রোগী ও তাদের স্বজনদের টাকা, মোবাইলসহ মালামাল চুরির ঘটনা ঘটেছে অন্তত ১০টি। চোরদের মূল নজর পেয়িং বেডে থাকা রোগীরা। তাদের আর্থিকভাবে বেশি সচ্ছল ভাবে চোরেরা।
হাসপাতালের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফি) মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘আমার ধারণা, নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিরা এসব চুরির সঙ্গে জড়িত। এরা সুযোগ সন্ধানী। নেশা পেলে সুযোগ বুঝে একটা ভাঙা বেঞ্চের পায়াও নিয়ে যায়।’
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে ওই হাসপাতালে মাঝেমধ্যে অভিযান চালায় পুলিশ। চোরও ধরা পড়ে। কিন্তু হাসপাতালের কেউ মামলা করতে চায় না। এসব ঘটনায় পুলিশ মামলা করলে আদালত প্রশ্ন করেন, চুরির মামলায় পুলিশ বাদী কেন। ফলে মামলাগুলো হালকা হয়ে যায়। আসামিও জামিনে বের হয়ে যান। তাই আমাদের করার কিছু থাকে না।’
হাসপাতালে একের পর এক চুরির বিষয়টি ৮ জানুয়ারি জেলার মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থাপন করেন ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ছিদ্দীকুর রহমান। পুলিশ সুপারের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন তিনি।
ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, ‘আমি তিন বছর ধরে এ জেলার সিভিল সার্জন ও ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কর্মরত রয়েছি। আমি কখনো শুনিনি পুলিশ আমাদের বাদী হতে বলেছে। বাদী হতে বললে আমরা হব না কেন? তারা তো (পুলিশ) বলে, বড় বড় মামলার আসামিরা জামিন পেয়ে যায়, আর এ তো সামান্য চুরির মামলা।’