যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এখন ঢাকায়। শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে নয়াদিল্লি থেকে ঢাকায় পৌঁছান তিনি।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ডোনাল্ড লু’কে অভ্যর্থনা জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক নাঈম উদ্দিন আহমেদ। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার ‘ভুল বোঝাবুঝির’ অবসান ঘটিয়ে সূদূরপ্রসারী অংশীদারত্ব এগিয়ে নিতে এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এক টুইট বার্তায় লু’কে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, ‘তিনি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে আলোচনা করবেন।’
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে রোববার সকালে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন ডোনাল্ড লু। এরপর তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
সংক্ষিপ্ত এই সফরের মধ্যেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন যুক্তরাষ্ট্রের এই সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
লু’র এই সফর বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার তাগিদ দুই পক্ষেরই রয়েছে। যে কারণে গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সফর হয়েছে। প্রতিটি সফরে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে।
‘মানবাধিকারসহ যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে আমলে নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। শ্রম অধিকারের বিষয়েও বোঝাপড়া চলছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আইলিন লাউবাচার কয়েক দিন আগেই সফর শেষ করেন। তার সফরকে ফলপ্রসূ বলছে ঢাকা। একইভাবে ডোনাল্ড লু’র সফরও ফলপ্রসূ হবে আশা প্রকাশ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, দুই পক্ষই নিজেদের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরবে।
সূত্র জানায়, ডোনাল্ড লু’র সফরে দ্বিপক্ষীয় সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। আর ঢাকার পক্ষ থেকে র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার, জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীকে ফেরত দেয়াসহ একাধিক বিষয় আলোচনার জন্য রাখা হয়েছে।
গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবসহ এই বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন। এরপর বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা বলা হলেও এখনো এ বিষয়ে অনড় যুক্তরাষ্ট্র।
ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে আলোচনায় এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রসঙ্গ তোলা হবে বলে শনিবার জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করব আমরা।’
মোমেন বলেন, ‘আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যের পরামর্শেই র্যাব তৈরি হয়। তখনকার পরিস্থিতি বিবেচনা করে ওই দেশগুলো র্যাবের কনসেপ্ট দেয়। তারাই তৎকালীন সরকারকে এ জন্য ইকুইপমেন্ট দেয়। তাদের কারণেই প্রাথমিকভাবে র্যাব চালু হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে র্যাব এখন অনেক পরিপক্ব। দেশের জনগণ তাদের পারফরম্যান্সের জন্য তাদের চায়। আমেরিকা অন্য বুদ্ধিতে তাদের ওপর প্রেশার দিয়েছে।’
বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের প্রতিক্রিয়া নিয়ে সরকারে যে অস্বস্তি আছে তা লু’র কাছে তোলা হবে কি না- জানতে চাইলে মোমেন বলেন, ‘আমাদের কোনো অস্বস্তি নেই। অন্যরা যদি পরামর্শ দেয়, তা যদি গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে তা আমরা গ্রহণ করব। আর পরামর্শ দিলেই তো হবে না, বাস্তবায়নও একটা বড় বিষয়। আমরা বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেব।’
‘আওয়ামী লীগ সব সময় একটা স্বচ্ছ নির্বাচন করতে চায়। আমাদের মৌলিক উদ্দেশ্য, আমরা একটি স্বচ্ছ, সুন্দর, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চাই।’ যোগ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।