ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তিন প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহারে কপাল খুলছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়তে যাওয়া উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি হতে যাচ্ছে এই উপনির্বাচন, তার আগে শনিবার এক সঙ্গে তিন প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহারে নতুন হিসাব সামনে এলো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সকালে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়া তিন প্রার্থী হলেন মঈন উদ্দিন মঈন, মাহবুবুল আলম চৌধুরী মন্টু ও শাহজাহান আলম সাজু। রোববার এই আসনের উপনির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।
এখন পর্যন্ত যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মাঠে আছেন তারা হলেন জাতীয় পার্টি থেকে দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা, জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পাওয়া আব্দুল হামিদ ভাসানী, আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু আসিফ আহমেদ এবং জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম জুয়েল।
বিএনপির সিদ্ধান্ত মেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে পদত্যাগ করেও এই আসনে উপনির্বাচনে ভোটের মাঠ ছাড়েননি উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে তিনি লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।
সাত্তার ভূঁইয়া বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এই আসন থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একবার স্বতন্ত্রসহ তিনি ওই আসনের পাঁচবারের সংসদ সদস্য। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে তিনি পরাজিত হন।
ছয়বার নির্বাচন করে তিনি মাত্র একবার পরাজিত হন। তার নির্বাচনে লড়ার সিদ্ধান্তে বিএনপির নেতা-কর্মীরাও বিস্মিত, কেউ কেউ ক্ষুব্ধ। তারা এই পদক্ষেপকে দেখছেন দলের সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গের প্রমাণ হিসেবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার কেন্দ্রীয় নির্দেশে জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রার্থীদের এক বৈঠকে তিন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হওয়া সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকারসহ দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা উপস্থিত ছিলেন।
আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় আবারও নির্বাচন নিয়ে সরগরম হয়েছে দুই উপজেলার রাজনৈতিক অঙ্গন। স্থানীয় নেতা-কর্মী ও ভোটাররা বলছেন, লড়াইটা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যেই হবে।
এই নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈন, জেলা আওয়ামীলীগের নতুন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম চৌধুরী মন্টু ও সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা।
তবে শনিবার আওয়ামী লীগের তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পদত্যাগের কারণে উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া বিজয়ের পথটা যেন পরিষ্কার হয়ে গেছে। তাছাড়া আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়াকে কেন্দ্র করেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের সরে গিয়েছেন- এমন আলোচনাও রয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈন বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের শিখরে পৌঁছে গেছে। এ আসনে সেই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে গেলে আট মাসে সেটি করা আমার জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। তাই ২০২৪ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই উপ-নির্বাচন থেকে আমি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলাম।’
শারীরিক অসুস্থতার জন্য মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম চৌধুরী মন্টু। এ ছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাহারের ব্যাপারে শিক্ষক নেতা শাহজাহান আলম সাজুকে একাধিকবার মোবাইলে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করায় জাতীয় সংসদে শূন্য হওয়া পাঁচটি আসনের উপনির্বাচনের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ঠিক করে গত ১৮ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
বিএনপির ছাড়া আসনগুলো হলো বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও ৩, ঠাকুরগাঁও-৩ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়া ভোটের আমেজ সেভাবে নেই কোথাও।