জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ক্যাম্পাসে উত্ত্যক্তের অভিযোগে সিঙ্গাপুর প্রবাসীকে মারধর করেছেন ছাত্রলীগ কর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার সামনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার বখতিয়ার আশরাফুলের বাড়ি রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকায়।
মারধর করা ছাত্রলীগের কর্মীরা হলেন মার্কেটিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের সৈয়দ আফ্রিদি ও রাহাত আলম রিজভী, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের আরিফ আহমেদ, আইন ও বিচার বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের রাকিব উল ইসলাম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের আজিম সাকিব, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের নাহিদ তমাল রোমান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের সৌমিক সরকার ও ইতিহাস বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মো. আদনান।
তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক ছাত্র এবং শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে তিনি জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ক্যাফেটেরিয়ার সামনে বহিরাগত একজন মেয়ে সৈয়দ আফ্রিদির সঙ্গে কথা বলছিলেন। ওই সময় বখতিয়ারকে দেখিয়ে দিয়ে ওই মেয়ে হাসতে থাকেন। কথা বলার একপর্যায়ে আফ্রিদি উত্তেজিত হয়ে মুঠোফোনে কল করে কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মীকে ডাকেন। পরে ছাত্রলীগের কর্মীরা একজোট হয়ে বখতিয়ারকে বেধড়ক কিলঘুষি মারতে থাকেন।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের উপপরিচালক সারোয়ার হোসেন বখতিয়ারকে তার কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসানসহ নিরাপত্তা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা গেলে ছাত্রলীগের অভিযুক্ত কর্মীরা জোর করে সেই কক্ষে ঢোকেন। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গেলে তাদের পেটানোর হুমকি দেন ছাত্রলীগের কর্মীরা।
মারধরের শিকার বখতিয়ার আশরাফুল বলেন, ‘আমি প্রথমবারের মতো এই ক্যাম্পাসে ঘুরতে এসেছি। আসার পথে সাভারের সিঅ্যান্ডবি এলাকায় বাস থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করি। এ সময় ওই মেয়ে আমার পাশাপাশি হাঁটছিলেন।
‘একপর্যায়ে তার সঙ্গে আমার কথা হয়। পরে তার ফোন নম্বর চাই আমি। ওই মেয়ের বয়ফ্রেন্ড আছে এবং তিনি আমাকে ফোন নম্বর দিতে পারবেন না বলে জানান। পরে তার কাছ থেকে হাসিমুখে বিদায় নিয়ে আমি ক্যাম্পাসে ঘুরতে থাকি। হঠাৎ করে কয়েকজন ছেলে এসে আমাকে মারধর করে।’
অভিযোগের বিষয়ে সৈয়দ আফ্রিদি বলেন, ‘আমার এক বান্ধবী সম্ভবত বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ফটকে নেমে হেঁটে ক্যাম্পাসের দিকে আসছিলেন। ওই সময় থেকেই বহিরাগত ওই ছেলে (আশরাফুল বখতিয়ার) আমার বান্ধবীকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে।
‘বিষয়টি বান্ধবী আমাকে জানায়। পরে আমরা ওই ছেলেকে উত্ত্যক্ত করার কারণ জিজ্ঞেস করি। একপর্যায়ে উপস্থিত সবাই তাকে মারধর করে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘উত্ত্যক্তের শিকার হওয়া মেয়েটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয় এবং মারধরের শিকার হওয়া ছেলেটিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়। যেহেতু আমাদের ক্যাম্পাসে ঘটনাটি ঘটেছে, তাই আমরা ওই ছেলেকে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে তুলে দিয়েছি।’
ওসি কামরুজ্জামান জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশের হাতে বখতিয়ারকে তুলে দেয়। পরে অভিভাবকের অনুরোধে রাতে তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।