ফেনীতে অপরাধের নতুন কৌশল ইটঅস্ত্র। যাত্রীবেশে ব্যাটারীচালিত অটোরিকশার পেছনে বসে নির্জন স্থানে নিয়ে ইটের আঘাতে মাথা থেতলে ছিনতাই চলছে। ১৩ দিনের ব্যবধানে একই ব্যক্তি তিন চালকের মাথায় আঘাত করে তিনটি অটোরিকশা ছিনতাই করে। একচালক প্রাণ হারালেও বাকি দুজন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে বেঁচে যান।
পুলিশ সে হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মঙ্গলবার সন্ধান পান নুরনবীর। পরে নুরনবীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
নুরনবীর বাড়ি ফেনী সদরের পশ্চিম ছনুয়া এলাকায়।
ফেনী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার সকালে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার জাকির হাসান।
ফেনী সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে চালক আকবরকে দিয়ে ছিনতাইয়ের মিশন শুরু করে নুরনবী। যাত্রীবেশে ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নের আত্তার পুকুরপাড়ের নির্জন এলাকায় নিয়ে পেছন থেকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে গুরুতর আহত করে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়। ঠিক তার দুদিন পর পাশের ইউনিয়নের ছনুয়ার শাহাপাড়া এলাকায় নিয়ে সোহেলকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে একই কায়দায় তার অটোরিকশাটিও ছিনতাই করে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও এখনো সুস্থ হয়ে উঠেনি ওই দুজন।
৬ জানুয়ারি লেমুয়া ইউনিয়নের কশবা এলাকায় নিয়ে একই স্টাইলে ইট দিয়ে আঘাত করে আবুল হোসেন কালামিঞাকে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় এই চালক।
নুরনবীকে গ্রেপ্তারের পর উদ্ধারকৃত মালামালের মধ্যে রয়েছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ইটের ভাঙ্গা অংশ ও রক্তমাখা ব্যাগ, লুন্ঠিত ৩০ হাজার টাকার মধ্যে ২০ হাজার ৯শ টাকা, একটি বেসলেট, লুন্ঠিত টাকা দিয়ে কেনা একটি সেকেন্ড হ্যান্ড এনড্রয়েড মোবাইল সেট, একটি বাটন মোবাইল, একটি রুপার চেইন, আলাদা ঘটনায় ছিনতাই করা একটি মোবাইল ফোন, ৩টি অটোরিকশা।
আহত আকবর হোসেন বলেন, ‘নুরনবী আমার সঙ্গে ৩০০ টাকার ভাড়া চূড়ান্ত করে তার বউকে আনার কথা বলে লেমুয়ার আত্তার পুকুর পাড়ে গেলে মাথায় আঘাত করে। ২ ঘন্টা পর আমার হুঁশ আসলে মানুষদের ডাকলে তারা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। অবস্থা বেশি খারাপ দেখে ফেনী হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তর করে। সেখানে এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে আমি কোনোরকম সুস্থ হয়ে উঠি। এখনো ঠিকমত কাজ করতে পারি না।’
আহত সোহেল বলেন, ‘নুরনবীর ইটের আঘাতে আমার মাথা থেতলে যায়। তাকে দ্রুত ফাঁসি দেয়া হোক।’
নিহত আবুল হোসেন মিঞার ছেলে দিদার হোসেন জানান, ‘আমার বাবার খুনি নুরনবীর দ্রুত শাস্তি কামনা করি। আমাদের পরিবারে পাঁচজন সদস্য। আমাদের প্রচুর টাকা ঋণ রয়েছে। গাড়িটা ধার করা টাকায় কেনা। এখনো সে টাকা শোধ করতে পারিনি।’
ফেনীর পুলিশ সুপার জাকির হাসান জানান, নুরনবী ব্যাটারীচালিত অটোরিকশা ছিনতাইয়ের মিশন শুরু করে আকবরকে দিয়ে। আকবরের পেছনে যাত্রীবেশে বসে মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে। এরপর অটোরিকশাটি ছিনতাই করে সফল হয়ে দ্বিতীয় মিশন করে সোহেলকে দিয়ে। তাকেও একই কায়দায় আঘাত করে অটোরিকশা ছিনতাই। তার তৃতীয় মিশন আবুল হোসেন কালা মিঞাকে দিয়ে। এটি ছিনতাই করতে গিয়ে তাকে জানে মেরে ফেলে।
তিনি আরও বলেন, ‘এই চক্রে আর কেউ নেই। তবুও আমরা অধিকতর তদন্ত করছি। এই ধরনের কোনো চক্র ফেনীতে আছে কি না।’