যদি শোনেন একটি ভাপা পিঠার দাম ৫ হাজার টাকা তাহলে অবাক হবেন তো?
আরও খটকা লাগবে, যখন শুনবেন, রাজধানী বা বড় শহরের কোনো অভিজাত দোকান নয়, মফস্বলের ফুটপাতের দোকানেই এ দামে বিক্রি করতে চান এই পিঠা।
দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে নরসিংদীর ভেলা নগর জেলখানা মোড়ে ফুটওভার ব্রীজের নিচে মালেক মিয়ার ভাপা পিঠা। প্রতি শীত মৌসুমে এখানে ২০টাকা থেকে ১ হাজার টাকার পিঠা বিক্রি হত। এবার মালেক ৫ হাজার টাকার ভাপা পিঠা বিক্রি করতে চান বলে ঘোষণা দেন।
দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নরসিংদীর ভেলা নগর জেলখানা মোড়ে ফুটওভার ব্রীজের নিচে পাঁচটি চুলায় পিঠা ভাপ চলছে। রনি এবং আরও তিনজন রয়েছে মালেক মিয়ার সহযোগী।
ভাপা পিঠাতে আতপ চালের গুড়া, খেজুরের গুড় ও নারকেলের পাশাপাশি ব্যবহার হচ্ছে সুগন্ধি পোলাও চালের গুড়া, কিসমিস, খেজুর, পেস্তাবাদাম, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, মোরব্বা, মাওয়া, মালাইসহ নানা উপাদান। পিঠার যে ঘ্রাণ আসে, তাতে জিভে জল আটকে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এ সুস্বাদু ভাপা পিঠা খেতে দোকানে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় থাকে, নরসিংদী ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে পিঠা খেতে এসেছে অনেকে।কনকনে শীতে কুমিল্লার দেবিদ্বার থেকে আসা মো. ফারুক আহমেদ বলেন, ‘ছেলে টিভিতে দেখেছে মালেক মিয়ার ভাপা পিঠা। ছেলের আবদার রাখতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নরসিংদীতে ভাপা পিঠা নিতে এসেছি। এখানে এসে সত্যিই মনটা ভরে গেল এই পিঠা দেখে। ছেলের শখ মেটাতে ১ হাজার ও ৫০০ টাকার দুইটি পিঠা নিয়েছি। অনেক আনন্দ লাগছে।’নরসিংদীর এলাকার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি শীতে মালেকের সুস্বাদু ভাপা পিঠা খেতে এই ফুটওভার ব্রীজের নিচে আসা হয়। আজও এসেছি। দীর্ঘ লাইনে থেকে ২০০ টাকার একটি পিঠা বাসায় নেয়ার জন্য অর্ডার দিয়েছি।’
মালেক মিয়ার ভাপা পিঠা খেতে বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছে লোকজন। ছবি: নিউজবাংলাদোকানের কর্মচারী মো. রনি মিয়া জানান, শুরু থেকেই এই দোকানে কাজ করেন। এবার ৩০ থেকে ৫০ টাকা, ১২০ টাকা, ২০০ টাকা, ৫০০ টাকা, ১০০০ টাকা মূল্যের পিঠা তৈরি করা হচ্ছে। বেশি দামের পিঠার আকার ছোট ভাপার মতো নয়। বেশ বড়সড় একেকটি পিঠা ১৫ থেকে ২০ জনেও খাওয়া যায়। প্রতিদিন রাত ১০টার মধ্যে বিক্রি শেষ হয়ে যায়।মালেক মিয়া বলেন, ‘প্রায় দেড় কেজি আতপ চাল ও আধা কেজি সুগন্ধি পোলাও চাউলের গুড়ার সঙ্গে বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয় এক হাজার টাকা দামে পিঠাটি। এবার ৫ হাজার টাকা দামের ভাপা পিঠা বানিয়ে খাওয়াতে চাই। তবে এই ৫ হাজার টাকার পিঠার জন্য একদিন আগে অর্ডার দিতে হবে।‘এ সময় সারা দেশে ভাপা পিঠা ব্যবসায়ীদের মধ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তিনি বলেন, যদি কেউ আমার পিঠার মতো বানিয়ে খাওয়াতে পারে, তাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে।’
মালেক জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অটোরিকশা ও সন্ধ্যা থেকে পান-সিগারেট বিক্রি করেন। তার এই ভাপা পিঠার ব্যবসা চলে কেবল শীতে। ঠান্ডা কমে গেলেই তিনি পিঠা বিক্রি বন্ধ করে দেন।