অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মানুষের কষ্ট যেন না হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই হুশিয়ারি দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মজুতদারি, কালোবাজারি ও এলসি খোলা নিয়ে যারা দুই নম্বরি করবে তাদের বিরুদ্ধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে। প্রয়োজনে আমরা আরও কঠোর ব্যবস্থা নেব। জনগণের কষ্ট লাঘবে যা করা দরকার তা-ই করা হবে।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্ন আয়ের মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থায় অসৎ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মুক্তির জন্য সমবায় মালিকানার ওপর গুরুত্ব দেবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসলে আমাদের দেশের অর্থনীতি তিন ধরনের- সরকারি, বেসরকারি ও সমবায়ভিত্তিক। যখন জানতে পারলাম বিশ্বব্যাপী খাদ্যের অভাব দেখা দেবে; সঙ্গে সঙ্গে আমরা সবাইকে আহ্বান করেছি প্রত্যেকের এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে।
‘যত অনাবাদি জমি আছে আবাদ করা হোক এবং উৎপাদন করা হোক। ফসল, ফলমূল, তরিতরকারি, শাকসবজি যে যা পারে উৎপাদন করুক। গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগি, কবুতর, কোয়েল যে যা পারেন লালনপালন করেন। আমাদের খাদ্যের চাহিদা যেন আমরা নিজেরা নিজেদের আওতায় রাখতে পারি সে ব্যবস্থাটা নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘এই আহ্বান জানানোর পর সারাদেশে একটা উৎসব পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। আমাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এবং দেশের মানুষই কিন্তু কিছু কিছু উৎপাদন করেছেন।
‘দেশের মানুষের ভোগ্যপণ্যের অধিকার যাতে নিশ্চিত থাকে সেজন্য আমরা ২০০৯ সালে ভোগ্যপণ্য অধিকার সংরক্ষণ আইন পাস করেছি। তারই অধীনে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে আমাদের খাদ্য মন্ত্রণালয়- সব ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে; যাতে করে মানুষের কষ্ট না হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সংসদ সদস্যের (প্রশ্নকর্তা) সঙ্গে একমত। আমাদের কিছু ব্যবসায়ী যারা এ ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা করেন; আসলে এটা খুব দুর্ভাগ্যের বিষয় রমজান মাসে কিংবা বিভিন্ন চাহিদার মাসে তারা যে করেই হোক জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে উৎসব-পার্বণে তারা দাম কমায়। আর আমাদের দেশে দেখি উল্টো।
‘শুধু তাই নয়, অনেক সময় তারা পণ্য আমদানি করতে একটু ঢিলেমি করে, জিনিসের দাম বাড়িয়ে চাহিদা বাড়িয়ে তারপর তারা ব্যবসা করতে চায়। এটা আসলে অমানবিক।’
কুইক রেন্টালসহ বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর আগে কোনো সরকারি বড় প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে পারেনি কেউ। এটা আওয়ামী লীগ সরকার করতে পেরেছে।
‘প্রশ্নকর্তাকে চ্যালেঞ্জ করছি- কোথায়, কখন, কতটুকু দুর্নীতি হয়েছে সেই কথাটা তাকে এখানে (সংসদে) স্পষ্ট করে বলতে হবে। তার জবাব আমি এখানে দেব।
‘একটি কথা আমি এখানে স্পষ্ট বলতে চাই, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকও পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল। সেখানে কি কোনো দুর্নীতি হয়েছিল? হয়নি। তারা প্রমাণ করতে পারেনি। কানাডার ফেডারেল কোর্টে যে মামলা হয় সেই রায়ে বলা হয়েছে, সব অভিযোগ মিথ্যা, কোনো অভিযোগই সত্য নয়।’
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘তাহলে এরা কীভাবে বলবে দুর্নীতি হচ্ছে? যদি দুর্নীতি হতো তাহলে এতো অল্প সময়ে বড় বড় প্রজেক্টের কাজ শেষ হতো? এর আগে কখনও হয়েছে?
‘প্রশ্নকর্তা সংসদ সদস্য বাংলাদেশের নাগরিক। তার একটি সেকেন্ড হোম রয়েছে। সেই সেকেন্ড হোম যেখানে অর্থাৎ ইংল্যান্ডে বিদ্যুতের দাম দেড়শ’ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে ইনফ্লেশন ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। সেখানে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা হয় এবং প্রতিটি বিল পরীক্ষা করা হয়। নির্দেশনার এক ফোঁটা বেশি হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়, ফাইন করা হয়। বাংলাদেশে এখনও সে অবস্থার সৃষ্টি হয়নি।
‘আর এই যে কুইক রেন্টালের কথা বলা হচ্ছে; হ্যাঁ, এগুলোর প্রয়োজন ছিল। কুইক রেন্টালের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো এনেছিলাম বলেই আমরা মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছিলাম।’
বিএনপি-জামায়াত আমলে বিদ্যুতের উৎপাদন হ্রাস করা হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ বিদ্যুৎ পেত না। দিনের পর দিন বিদ্যুতের জন্য হাহাকার ছিল। ইন্ডাস্ট্রিগুলো চলতে পারত না। গ্যাসের জন্য হাহাকার ছিল। আমরা এসে এসব সমস্যার সমাধান করি। সে অনুযায়ী আমরা ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। এরপরও যারা কুইক রেন্টাল নিয়ে বেশি কথা বলবেন তাদের বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়া হবে।’