রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে ৩২ বছর আগে গুলিতে সগিরা মোর্শেদ নিহতের ঘটনায় করা মামলায় তার মেয়ে সাদিয়া চৌধুরীকে জেরা করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
মঙ্গলবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক রফিকুল ইসলামের আদালতে তাকে জেরা করা হয়। তবে এদিন জেরা শেষ না হওয়ায় অবশিষ্ট জেরা এবং পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ঠিক করেন বিচারক।
মামলাটিতে এখন পর্যন্ত ৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।
আলোচিত এ মামলায় ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন।
২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম আদালতে মামলাটির অভিযোগপত্র জমা দেন।
৩২ বছর আগের আলোচিত এ মামলার আসামিরা হলেন সগিরা মোর্শেদের ভাশুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী, হাসান আলীর স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহিন, শ্যালক আনাছ মাহমুদ রেজওয়ান ও ভাড়াটে অপরাধী মারুফ রেজা। তাদের মধ্যে সায়েদাতুল মাহমুদা জামিনে আছেন। বাকি তিনজন কারাগারে।
২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরুর আদেশ দেয়।
মামলায় বলা হয়েছে, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সগিরা মোর্শেদ বাসা থেকে বের হয়ে তার বড় মেয়ে সারাহাত সালমাকে নিতে স্কুলের দিকে যাচ্ছিলেন। স্কুলের সামনে দুষ্কৃতকারীরা তার হাতের সোনার চুড়ি ধরে টান দেয়। চুড়ি দিতে অস্বীকার করায় সগিরাকে গুলি করা হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত বলে জানান।
ওই দিনই রমনা থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন সগিরার স্বামী সালাম চৌধুরী। প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক ঘটনায় জড়িত দুজনকে শনাক্ত করলেও গোয়েন্দা পুলিশ মন্টু ওরফে মরণ নামে একজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। পরে আদালতের নির্দেশে পুনরায় তদন্তে বর্তমান আসামিদেরও নাম আসে।
১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি আসামি মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু বকর সিদ্দীক। সাক্ষ্য নেয়া হয় সাতজনের।
সাক্ষ্যে বাদীপক্ষ থেকে বলা হয়, তদন্তের সময় আসামি মন্টু এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসানের নিকটাত্মীয় মারুফ রেজা গ্রেপ্তার হন। কিন্তু মারুফ রেজার নাম বাদ দিয়েই অভিযোগপত্র দেয়া হয়।
সাক্ষ্য চলার সময় মারুফ রেজার নাম আসায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ১৯৯১ সালের ২৩ মে মামলার অধিকতর তদন্তের আদেশ দেয় ঢাকার বিচারিক আদালত। ওই আদেশের বিরুদ্ধে মারুফ রেজা রিভিশন আবেদন করেন।
এ অবস্থায় ১৯৯১ সালের ২ জুলাই হাইকোর্ট মামলাটির অধিকতর তদন্তের আদেশ ও বিচারকাজ ছয় মাসের জন্য স্থগিতের পাশাপাশি অধিকতর তদন্তের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দেয়।
পরের বছর ২৭ আগস্ট জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার বিচারকাজ স্থগিত থাকবে বলে আদেশ দেয় হাইকোর্ট।
এ মামলার সবশেষ তদন্ত কর্মকর্তা গত বছর বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের নজরে আনলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রপক্ষ।
এরপর বিষয়টি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চে তোলা হয়। আদালত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিলে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।