ময়মনসিংহে এবার প্রায় দ্বিগুণ জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। গত বছর জেলায় যেখানে সরিষা আবাদ হয়েছিল পাঁচ হাজার ২৪৬ হেক্টর জমিতে, এবার সেই আবাদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ২০৫ হেক্টরে। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা সরিষা আবাদে ঝুঁকেছেন। তবে বোরো আবাদে দুশ্চিন্তা কৃষকের। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। কুয়াশায় নষ্ট হচ্ছে বীজতলার চারা।
সরেজমিনে সদর উপজেলার বোরোর চর ও চর সিরতা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহ। কানে ভেসে আসছে মৌমাছির ভোঁ ভোঁ শব্দ। এতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটলেও অনেকের কপালে দুশ্চিতার ভাঁজ ফেলেছে বোরো আবাদ।
পরানগঞ্জ বীর বওলা গ্রামের কৃষক হাসিম মিয়া জানান, নভেম্বরের শুরুতে আমন ধান কাটার পরপরই ৫০ শতাংশ জমিতে সরিষা রোপণ করেন। এখন তার ক্ষেতজুড়ে হলুদের সমারোহ। গত বছর ৪০ শতাংশ জমিতে ৩০ হাজার টাকা লাভ করায় এবার বেশি জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন।
একই গ্রামের এবাদুল মিয়া বলেন, ‘গত বছর ২৫ শতাংশ জমিতে বারি ১৪ জাতের সরিষা আবাদ করে লাভবান হয়েছি। তাই এবার ৩৫ শতাংশ জমিতে চাষ করেছি। এবারও আশানুরূপ ফলন হয়েছে। তাই লাভের পাল্লাও ভারি হবে।’
শাহবাজার এলাকার কৃষক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অনেকেই শীতের প্রকোপ বাড়ার আগেই সরিষা চাষ করেছেন। ফলে তাদের এতটা কষ্ট না হলেও এখন তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে বোরো মাঠ প্রস্তুত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তীব্র শীত না থাকলে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বোরোর চারা রোপণ শুরু করা যেত।’
আব্দুল মজিদ নামে আরেকজন জানান, শীত না থাকলে অনেক আগেই কৃষকরা মাঠে নেমে বোরো চারা রোপণ করতেন। শীতের কারণে মাঠ প্রস্তুত করা সম্ভব হচ্ছে না। ঠান্ডা কমে এলে পুরোদমে চারা রোপণ শুরু করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি চলতি মৌসুমে দুই একর জমি বোরো আবাদের জন্য প্রস্তুত করেছি। এর জন্য বীজতলার চারাও তৈরি করেছি। কিন্তু তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে চারা রোপণ করা সম্ভব হচ্ছে না। চারা রোপণের জন্য কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। শীত এখন দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে।’
কৃষি বিভাগ বলছে, ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরিষা আবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করতে জেলার ৩৯ হাজার ৫০০ কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে এক কেজি করে সরিষা বীজ দেয়া হয়েছে। কৃষকরা বারি ১৪, বিনা-৪, ১৫ ও ১৭ জাতের সরিষা আবাদ করেছেন।
চলতি মৌসুমে ময়মনসিংহ জেলায় দুই লাখ ৬২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৯২৫ হেক্টর জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে। শীত কমে এলে কৃষকরা পুরোদমে বোরো আবাদ করতে পারবে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও কোনো সমস্যা হবে না।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক মতিউজ্জামান বলেন, ‘সরিষার তেলে ঔষধি গুণের পাশাপাশি সরিষার খৈল পশুখাদ্য ও জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধির কাজে ব্যবহার হয়। সরিষার গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। জমিতে সরিষার আবাদ করলে ওই জমিতে সরিষার পাতা পড়ে জমির খাদ্য চাহিদা অনেকাংশে মিটিয়ে থাকে। এ ছাড়া ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে বেশি জমিতে সরিষা আবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করেছি।’