জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের একটি চক্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও পোস্টারে দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে বলে দাবি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
চক্রটি দেশ-বিদেশে বসে ব্যাংকে টাকা নেই, রিজার্ভ নেই বলে ব্যাংক থেকে আমানত তুলে ফেলার মতো গুজব রটাচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশের এ শাখা।
ব্যাংক ও ব্যাংকিং খাত নিয়ে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে রোববার পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন মোহাম্মদ নুর উন নবী, আফসার উদ্দিন রোমান, আবু সাঈদ সাজু, স্বাধীন মিয়া ও আবদুস সালাম।
রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে দুপুর ১২টার দিকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান ডিএমপি ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার আসামিরা দেশে-বিদেশে বসে গুজব ছড়িয়েছে। পাশাপাশি তাদের সহযোগীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাংকিং খাত নিয়ে গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি তারা প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠাতে অনুৎসাহিত করছে। এই চক্রের অনেকেরই নাম পেয়েছি।
‘এই চক্রের সঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক পরিচালকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা জড়িত রয়েছেন। আমরা সবার নাম পেয়েছি। দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
তিনি বলেন, ‘বিদেশে অবস্থানরত এই চক্রের বেশ কয়েকজনের নাম পেয়েছি। তাদের নিয়ে কাজ চলছে। মামলায় তাদের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
চক্রের সদস্যরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত কি না জানতে চাইলে ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘জামায়াত-শিবিরকর্মী সমর্থকরা ছাড়া অন্য কোনো দলের সম্পৃক্ততা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।’
ব্যাংকিং খাত নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে হারুন বলেন, ‘দেশে বর্তমানে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হওয়ার বিষয়টি একটি গুজব। আতঙ্কিত হয়ে ব্যাংক থেকে আমানত উত্তোলন থেকে বিরত থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড দেশের একটি স্বনামধন্য ব্যাংক। ব্যাংকটি একসময় ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত মীর কাসেম আলীসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের দখলে ছিল। ব্যাংকটি পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের দখল থেকে মুক্ত হলে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির চক্র ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা নিয়ে অপপ্রচার চালাতে থাকে। দেশবিরোধী চক্র সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাংকিং খাত নিয়ে আস্থার সংকট তৈরি করার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল।
‘এই চক্রের মূল উদ্দেশ্য দেশের আর্থিক খাতকে অস্থিতিশীল করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা। তারা এস আলম গ্রুপসহ স্বনামধন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানদের নামে ব্যাংকিং সংক্রান্ত মিথ্যা অপপ্রচার ও প্রপাগান্ডা চালিয়ে আসছে। ব্যাংকিং খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে বলে অপপ্রচার চালালেও পরবর্তী সময়ে এর পরিপ্রেক্ষিতে কোনো ধরনের সাক্ষ্যপ্রমাণ তারা দিতে পারেনি। তারা প্রবাসীদের রেমিট্যান্স না পাঠানোর বিষয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
‘ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাবে, ব্যাংকে টাকা নেইসহ নানাবিধ গুজব রটানোর কাজে জড়িত। এইসব গুজবের বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক হতে বিভিন্ন সময় পরিপত্র জারি করা হয়েছে।’
সম্প্রতি ব্যাংকিং খাত নিয়ে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে রাজধানীর গুলশান থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়।
মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।