দুই শ কোটিরও বেশি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে মামলায় আগাম জামিন পেয়ে বিচারিক আদালতে চালাকি করতে গিয়ে ফেঁসেছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আবু আহাম্মদ। তাকে পুলিশে দিয়েছে হাইকোর্ট।
রোববার বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চের আদেশের পর আবুকে শাহবাগ থানার পুলিশ নিয়ে যায়।
আদালতের আদেশের বিষয়টি জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম আবুল হোসেন ও মো. হাবিবুর রহমান। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহীন আহমেদ।
এর আগে আবু তথ্য গোপন করে নিম্ন আদালতসহ উচ্চ আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। তথ্য গোপন করে জামিন নিতে গেলে উচ্চ আদালতে এটি ধরা পড়ে। তিনি ওই দিন আদালত থেকে পালিয়ে যান। পরে হাইকোর্ট আইনজীবীর মাধ্যমে তাকে হাজির হতে নির্দেশ দিলেও তিনি হাজির হননি।
গত ৬ ডিসেম্বর আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এরপর আজ তিনি হাইকোর্টে হাজির হলে আদালত তাকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
মামলা থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৮ মার্চ সিআইডির উপপুলিশ পরিদর্শক মো. হারুন উর রশীদ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির জাপতনগর এলাকার ফয়েজ আহম্মদ ওরফে বালী সওদাগরের ছেলে আবু আহম্মদ ওরফে আবুসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মামলায় বলা হয়, আসামিরা একে অপরের সহায়তায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েকটি ব্যাংক হিসাব নম্বরে ১২ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে স্বর্ণ চোরাচালান, চোরাই এবং অন্যান্য দ্রব্যের অবৈধ ব্যবসা ও হুন্ডির মাধ্যমে ২০৪ কোটি টাকা পাচারের অর্থ দিয়ে গাড়ি, বাড়ি, মার্কেটসহ বিভিন্ন সম্পত্তি অর্জন করেছেন।
চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, চাঁদগাঁও, ফতেহনগর, রাউজান, ফটিকছড়িতে জমি ও বাড়ির মালিক হয়েছেন আবু। দুবাইতেও ২-৩টি দোকান রয়েছে তার। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় স্বর্ণ চোরাচালানের মামলা রয়েছে।
এ মামলায় চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আগাম জামিন চান আবু আহাম্মদ। হাইকোর্ট তিন সপ্তাহের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়।
এই নির্দেশের পর গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি আসামি আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। এই আবেদনের পর চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ নথি তলব করে ওই বছরের ৫ মে জামিন শুনানির জন্য দিন রাখেন। কিন্তু চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে নথি না আসায় জামিন শুনানি হয়নি। এরপর ১৩ জুলাই দিন রাখা হলেও নথি না আসায় জামিন শুনানি হয়নি।
পরে ঠিক করা তারিখে নথি না আসায় ৩১ আগস্ট নথি উপস্থাপন করে ৫ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করে আদালত। এভাবে আরও কয়েকবার শুনানির জন্য সময় চান আবু। সর্বশেষ গত বছরের ১৩ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
বিশেষ আদালতের আদেশে বলা হয়, ৯ মাস ধরে জামিন শুনানি না করে আসামি সময়ের দরখাস্ত দিয়ে আসছেন, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং উচ্চ আদালতের আদেশ অবমাননার শামিল।
এরপরই ওই আসামি পুনরায় হাইকোর্টে হাজির হয়ে আগাম জামিন চান, যা পরে আদালতের চোখে সেটি ধরা পড়ে।