‘শীতে এহন মামা ভাড়া কমে গেছে। যে ঠান্ডা পড়ছে, তাতে কেউ বাইর হয় না। আমাগো লাগছে জ্বালা। রিকশা নিয়ে বাইর হই, ভাড়া না পাইলে ট্যার পাই কী ঠান্ডা।
‘এই যে আপনে উঠলেন, এহন আমি গাড়ি চালামু আর শরীর গরম হইব। আপনারে নামায় দেওনের পর আবার শীত লাগা শুরু হইব। আসলে মামা, ভাড়া পাইলে গরম লাগে; নাইলে তো ঠান্ডায় শ্যাষ।’
কথাগুলো বলছিলেন রিকশাচালক মহিউদ্দিন, যিনি ঢাকায় গত চার বছর ধরে রিকশা চালান।
এবারের শীতে কাহিল হয়ে পড়া এ শ্রমজীবী বলেন, এর আগে এমন ঠান্ডার অনুভূতি পাননি।
ঢাকায় এমন শীত গত পাঁচ বছর আগে একবার ছিল। তখন তাপমাত্রা নেমেছিল ৯-এর ঘরে। গত দুই বছরেও এমন তাপমাত্রা পায়নি রাজধানীবাসী।
হুট করে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় রাজধানীতে বেড়েছে শীতের তীব্রতা, যাতে বড় বিপাকে শ্রমজীবী মানুষ। কাজের আশায় প্রচণ্ড শীতে ঘর থেকে বের হয়েও মিলছে না কাজ।
কয়েকজন রিকশাচালক জানান, ঢাকায় শীত বেড়ে যাওয়ায় রিকশা চালানো যাচ্ছে না। পেটের দায়ে বের হলেও যাত্রী কম।
তাদের ভাষ্য, শীতের কারণে সকালে বের হতে পারছেন না। সন্ধ্যার আগে ফিরে আসতে হয়। গা গরম করার কাপড় না থাকায় রাতভর কষ্ট হয়।
মহিউদ্দিন জানান, গত এক সপ্তাহ থেকে ভাড়া কমে গেছে অনেক। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ বাজারে জীবন চালানোই দায় হয়ে পড়েছে।
রংপুরের এই রিকশাচালকের নিজের এলাকায় ফিরে যাওয়ার মতো সামর্থ্য নাই। আবার এলাকায় শীতের তীব্রতাও অনেক।
‘দ্যাশে যামু সেই পথ নাইগা মামা। ঠান্ডা বেশি ওইহানে আরও’, বলেন উভয় সংকটে থাকা এই রিকশাচালক।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে রোববার ৬টা ৪৩ মিনিটে সূর্য ওঠার কথা থাকলেও তার দেখা মেলেনি। তাপমাত্রা ছিল সাড়ে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে, তবে এতে করে থেমে নেই নিম্ন আয়ের মানুষের দিনযাপন। সকালের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই কাজে বেরিয়ে পড়ছেন তারা।
পুরান ঢাকার বিভিন্ন মালামাল পরিবহনের কাজে ঠেলাগাড়ি ব্যবহার হয়। শীতের এই দাপটেও সকাল থেকে কাজে যাচ্ছেন ঠেলাগাড়ির চালকরা।
রাস্তার পাশে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাবের দোকান নিয়েও বসছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের একজন মাজাহার বলেন, ‘রোদের আশায় বসে থাকি। যেভাবে ঠান্ডা পড়ছে, তাতে তো কেউ ডাব খাইবে না। বিক্রি কম।’
মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানেও গত কয়েক দিন কমেছে মানুষের আনাগোনা। অনেকে চায়ের দোকান খুলছে দুপুরের পরপর।
ভ্যানে ভ্যানে তরকারি বিক্রি করা মাসুম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকাল থেকে তরকারি নিয়ে ঘুরলেও দুপুরের আগে বিক্রি হয় না। ঠান্ডার জন্য কেউ দুপুরের আগে বাইর হয় না।
‘গত কয়েক দিনে তেমন বেচাকেনা নাই বললেই চলে। একই মাল ভ্যানে রইয়া গ্যাছে।’
কেমন আছেন ছিন্নমূল মানুষ
শীতের দাপটে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে নগরীর ভাসমান মানুষ। হঠাৎ ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় রাত পার করতে হচ্ছে সামান্য ছেঁড়া কাঁথা বা দানের পাতলা কম্বলে।
মৌচাক-মালিবাগে ফ্লাইওভারের নিচে চোখ পড়লেই দেখা মেলে এমন মানুষের। শহরের একটা বড় অংশে ফ্লাইওভারকেন্দ্রিক জীবনে অভ্যস্ত ছিন্নমূল মানুষগুলো গত এক সপ্তাহ ধরে সূর্যের আশায় দিন গুনছেন।
তীব্র শীতে বিপাকে আছেন গৃহকর্মীরাও। তাদের একজন সাথী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভোরে উইঠ্যা কামে যাওন লাগে। দুপুরেরতন কাম শ্যাষ হইলে আসি। আমাগো তো থাহনের জায়গা নাই। ব্রিজের নিচে রাতে থাহন লাগে।’
গত কয়েক দিন থেকেই কুয়াশার চাদরে ঢাকা রাজধানী। কিছু কিছু স্থানে কুয়াশা এত ঘন হয়ে জমে যে সামান্য দূরের জিনিসও দৃশ্যমান হয় না। শীত ও কুয়াশার এ অবস্থা আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদ সানাউল হক বলেন, ‘দুপুরের পর রাজধানীতে সূর্যের দেখা মিলতে পারে। শীতের তীব্রতা আরও দু-তিন দিন এমন থাকতে পারে, তবে উত্তরাঞ্চলে সকালের দিকে সূর্যের দেখা মিলেছে।’