পুলিশ সপ্তাহের পঞ্চম দিনে নিজেদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরেছেন এই বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনে শনিবার রাতে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে এসব দাবি তুলে ধরা হয়।
পুলিশের পক্ষ থেকে তুলে ধরা দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কাগজে-কলমে পুলিশ অধিদপ্তর চায় না; তারা চায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার হিসেবে লিখতে।
এ ছাড়া আইজিপির র্যাংক ব্যাচ ফোর স্টার করা, পুলিশ হাসপাতালকে মেডিক্যাল কলেজ করা, বঙ্গবন্ধু ইউনিভার্সিটি অফ পুলিশ অ্যান্ড ক্রিমিনাল জাস্টিস নামে পুলিশের জন্য বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় করাসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন তারা।
রাজারবাগ পুলিশ লাইন টেলিকম অডিটরিয়ামে রাত ৮টায় মতবিনিময় সভা শুরু হয়ে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চলে।
সভায় পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি তুলে ধরার পর বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চাকরিরত অবস্থায় পুলিশ সদস্য মারা গেলে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি যৌক্তিক দাবি। সিনিয়র সচিব এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, সাইবার জগতটা আমাদের জন্য নতুন। অপরাধীরা এই জায়গাটায় অত্যন্ত সক্রিয়। এখানে আমাদের অনেক কিছু করতে হবে। আমাদের সাইবার ইউনিট আরও শক্তিশালী করতে হবে।
‘নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি এসেছে। যত বেশি আমরা পুলিশকে প্রশিক্ষণ দিতে পারব, তত বেশি দক্ষ পুলিশ বাহিনী তৈরি হবে। এ দাবিটাও যৌক্তিক।’
উপস্থিত কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রূপান্তরের দাবি এসেছে। আপনাদের হাসপাতালটি ইতোমধ্যে ভালো মানের একটি হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়েছে। এটাকে আপনারা কলেজে রূপান্তরিত করতে চান।
‘আপনারা বিষয়টি আরও একটু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলবেন। কারণ আমাদের যে পরিমাণ মেডিক্যাল কলেজ আছে, কোনো কোনো মেডিক্যাল কলেজে তো শিক্ষকই নেই।’
‘বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমাদের সচিব দেখবেন। প্রত্যেক বিভাগে একটি করে আধুনিক হাসপাতাল হবে- এটাও আমি যৌক্তিক দাবি মনে করি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশকে সব জায়গায় যেতে হয়। তাই যানবাহনের প্রয়োজন আছে। যানবাহনের জন্য এবারও আমাদের বাজেট ছিল। অতিমারির ধকল যেতে না যেতেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হয়েছে। যানবাহন সংগ্রহের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে এবং পুলিশের যানবাহনকে টপ প্রায়োরিটি দিতে হবে।’
পুলিশের পক্ষ থেকে উত্থাপিত অন্যান্য দাবির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তাদের বদলি ও পদোন্নতি পুলিশ হেডকোয়ার্টার কর্তৃক সম্পাদনের কথা বলা হয়েছে। এটাও আমাদের সচিব মহোদয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন। এটা কিভাবে আরও সুন্দর ও যুগোপযোগী করা যায় এবং আপনারা ভালো সেবা পান সেটা তিনি দেখবেন।
‘মন্ত্রণালয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স নামটি ব্যবহার করা...। এখানে কোনো সমস্যা নেই। কেন বলা হয় না এটা আমি নিজেও জানি না। সিনিয়র সচিব মহোদয়কে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলব। পুলিশে কর্মরত সিভিল স্টাফদের অবসরকালীন রেশন সুবিধা…। এটা অন্য বাহিনী পায় কি না আমরা চেক করে দেখব।’
পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আপনাদের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা দাবির মধ্যে যেগুলো মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের সিনিয়র সচিব করতে পারবেন, তিনি ইমিডিয়েটলি করে দেবেন। আর যেগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের প্রয়োজন পড়বে, সেগুলো পর্যায়ক্রমে এবং আলোচনা করে যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণে আমরা চেষ্টা করব।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আরেকটি দাবি এসেছে- আমাদের আইজিপি মহোদয়কে সিনিয়র সচিব...। যেখানে আমরা বলছি সিনিয়র সচিব সেখানে তাকে সিনিয়র সচিব ঘোষণা দিতে বিলম্ব কেন আমার জানা নেই। যেগুলো কনফার্ম রয়েছে সেগুলো যেন তারা দ্রুত ভোগ করতে পারেন, সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত।’