আবহাওয়ার পূর্বাভাসে কোনো সুখবর নেই। বরং রোববার থেকে উন্নতির যে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল তা থেকে সরে এসেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। নতুন খবর হলো, দেশের অধিকাংশ এলাকায় বয়ে চলা শৈত্যপ্রবাহ পরিস্থিতি আরও এক সপ্তাহ অব্যাহত থাকবে।
দেশের সব বিভাগেই চলছে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ। শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায়, ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শুক্রবার দুপুরের পর রাজধানীতে সূর্যের কিছুটা দেখা মিললেও শনিবার নগরীর পুরোটাই ছিল ঘন কুয়াশার দখলে। সূর্যের কোনো দেখা মেলেনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে শুক্রবার বলা হয়েছিল, রোববার থেকে শীতের তীব্রতা একটু কমতে পারে। তবে এখন তারা সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে। শনিবার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বর্তমান যে শীতের তীব্রতা রয়েছে তা আরও এক সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে। এর মধ্যে কোথাও কোথাও তাপমাত্রা সামান্য ওঠা-নামা করতে পারে।
গত পাঁচ বছরে রাজধানীবাসী সর্বনিম্ন তাপমাত্রার অনুভূতি পেয়েছে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত। এ সময় ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ২০১৮ সালে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহীতে কনকনে শীতে কষ্ট পাচ্ছেন শ্রমজীবীরা। ছবি: নিউজবাংলা
সারা দেশই মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কবলে
সারা দেশের সব বিভাগেই মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রা শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গাতে, ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে, ২৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দেশের ১১টি জেলাসহ রাজশাহী বিভাগে প্রবাহিত হচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। তা কিছু এলাকায় প্রশমিত হতে পারে।
শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়া জেলাগুলো হলো ফরিদপুর, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, দিনাজপুর, নীলফামারী পঞ্চগড়, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা ও বরিশাল। এসব জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে। তবে রাজশাহীর চারটি অঞ্চলে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম। এর মধ্যে রাজশাহী, ঈশ্বরদী ও বদলগাছীতে তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। এসব জনপদে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রয়েছে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে।
সাত দিন চলবে এমন অবস্থা
শীতের এমন তীব্রতা আরও সাত দিন স্থায়ী হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আবহাওয়ার এমন অবস্থা থাকবে। তবে শীতের এমন তীব্রতা আরও দুই-এক দিন থাকবে। এর মধ্যে কোনো কোনো দিন তাপমাত্রা কম-বেশি হবে। কুয়াশার দাপট চলছে। সূর্য উঠতে পারে আবার না-ও উঠতে পারে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক শুক্রবার নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘রোববার থেকে অবস্থার পরিবর্তন হবে। ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) কুয়াশা কাটতে প্রায় বেলা ৪টা বেজে গিয়েছিল। গতকাল (শুক্রবার) ৩টার পর পর কুয়াশা কেটে গেছে। কাল (শনিবার) আর একটু এগিয়ে আসবে। এভাবে আশা করি রোববারের মধ্যে তীব্র শীতের অনুভূতি কমে যাবে।’
শীত কেন বেশি
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের সবচেয়ে শীতলতম মাস হচ্ছে জানুয়ারি। এই মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এক থেকে দুটি মাঝারি ও মৃদু মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। অধিদপ্তরের এক মাস মেয়াদি পূর্বাভাসেও তা বলা হয়েছে।
তবে দেশের পার্বত্য অঞ্চলে শীতের দাপট কিছুটা কম রয়েছে। পাহাড়ের কারণে বাতাসের তারতম্য ঘটে। ফলে সেখানে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে থাকে।
গত দুই বছরেও রাজধানীতে এমন তীব্র শীতের অনুভূতি পায়নি মানুষ। এবার হুট করেই গত সপ্তাহে ঢাকাসহ সারা দেশের তাপমাত্রা ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি কমে আসে।
আবহাওয়াবিদ জেবুন্নেসা বলেন, ‘সাধারণত তিন থেকে চার বছর পর পর এমনটা হয়ে থাকে। আর এটা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হচ্ছে। ভারতের দিল্লি থেকে একটি কুয়াশা অঞ্চল আমাদের দেশের দিকে ধাবিত হয়েছে। এর ফলে সূর্যের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। আর তাতে করে দিনের তাপমাত্রা কমে গিয়ে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।
খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে শিশুরা। ছবিটি শনিবার সকালে কুমিল্লা থেকে তোলা। ছবি: নিউজবাংলা
পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক সমুদ্র চাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। তার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় সারা দেশে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি থাকতে পারে।