বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিআইএফসির অর্থ লুট ঠেকাতে ৯ সুপারিশ

  •    
  • ৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৯:৩৪

‘আদালতের নির্দেশে গঠিত উচ্চপর্যায়ের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টে দাখিল হয়েছে। ৫০০ পৃষ্ঠারও অধিক এই প্রতিবেদনে অর্থ লুটপাট ঠেকাতে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কবে শুনানি হবে তা ঠিক হয়নি।’

বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফসি) মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লুট ঠেকাতে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা ফেরাতে ৯ দফা সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

হাইকোর্টে ৭ ডিসেম্বর এসব সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

প্রতিবেদন দাখিল করা আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টে দাখিল হয়েছে। ৫শ পৃষ্ঠারও অধিক এ প্রতিবেদনে অর্থ লুটপাট ঠেকাতে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কবে শুনানি হবে তা ঠিক হয়নি।’

৯ দফা সুপারিশে যা বলা হয়েছে

এক. বিআইএফসিতে সব অনিয়ম ও অবৈধ কর্মকান্ড সংঘটনে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং পাশাপাশি দায়ী ব্যক্তিদের ভবিষ্যতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ লাভের অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।

দুই. নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট বজায় রাখতে ও জনগনের অর্থের ঝুঁকি বন্ধে আন্তব্যাংক লেনদেনের কার্যক্রম পরিচালনা পুরোপুরি পরিহার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ড ও একই ইনস্ট্রুমেন্ট ইস্যুর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী তহবিল সংগ্রহ করতে হবে।

তিন. আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩-এর ১৮ ধারায় উল্লিখিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যথা (ক) নেয়া আমানতের প্রদেয় সুদের সব্বোর্চ হার (খ) কার কাছ থেকে কত ঋণ গৃহীতব্য হবে তার সর্বোচ্চ পরিমাণ, (গ) প্রদত্ত ঋণ পরিশোধের সর্বোচ্চ সময়সীমা, (ঘ) প্রদত্ত বিভিন্ন শ্রেণীর ঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার ও হিসাবায়ন পদ্ধতি (ঙ) ঋণ দেয়ার সর্বোচ্চ সীমা (চ) বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিতব্য রিজার্ভ এবং (ছ) আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দায় পরিশোধের সক্ষমতার মতো যৌক্তিক পর্যায়ে ইক্যুইটি উন্নীত করাসহ জনস্বার্থে মুদ্রানীতির উন্নতি বিধানকল্পে অন্যান্য বিষয় নিয়ন্ত্রণে ব্যাংলাদেশ ব্যাংককে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

চার. আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সুষ্ঠু তদারকির জন্য নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা/কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংক, আরজেএসসি, বিএসইসির মধ্যে কার্যকর সমন্বয় জোরদার করা প্রয়োজন।

পাঁচ. বর্তমান আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩-এ কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পর্ষদে পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন গ্রহণের বিধান নাই। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ইচ্ছেমতো পরিচালক নিয়োগ করে থাকে, অনেকক্ষেত্রে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টর হিসেবে পরিচালকদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে বা তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিদেরও নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পর্ষদে পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন/অনাপত্তি গ্রহণের শর্তারোপকরণ প্রয়োজন।

ছয়. বর্হিনিরীক্ষক ফার্মের জরিমানা/দণ্ড হওয়া মাত্রই সংশ্লিষ্ট ফার্মকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার যোগ্য ফার্মের তালিকা হতে বাদ দিতে হবে।

সাত. বাংলাদেশ ব্যাংকের নথিগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নথির নোটাংশে এবং পত্রাংশে পৃষ্ঠা নম্বর দেয়া হয় না, অনেক ক্ষেত্রে নোটাংশে অনুচ্ছেদ নম্বরও দেয়া হয় না। ফলে নথির মধ্যে কোনও পৃষ্ঠা নিরুদ্দেশ (মিসিং) হয়েছে কি না তা বোঝার সুযোগ থাকে না। নোট উপস্থাপনকারী হতে অনুমোদনকারী পর্যন্ত প্রত্যেক কর্মকর্তাদের শুধুমাত্র সই থাকে, তার নাম থাকে না। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করা কষ্টকর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নথি ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ আধুনিকায়ন করতে নথির নোটাংশ, পত্রাংশ ও অনুচ্ছেদে নাম্বারিং করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করার সুবিধার্থে নথির নোট উপস্থাপনকারী হতে অনুমোদনকারী পর্যন্ত প্রত্যেক কর্মকর্তার সইয়ের সঙ্গে তার নামের সিল ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে।

আট. আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কার্যকর তদারকি রাখার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের মধ্যে কার্যকর আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয় গড়ে তোলা প্রয়োজন। প্রকৃত খেলাপি ঋণ চিহ্নিতকরণ ও তার তথ্য দ্রুত সিআইবিতে সংরক্ষণ নিশ্চিতের ব্যবস্থা করার জন্য পরিদর্শন দলে সিআইবি সদস্য অন্তর্ভুক্ত রাখা প্রয়োজন।

নয়. প্রতিবছর ভিজিলেন্স, অফসাইট সুপারভিশন ও মনিটরিংয়ে প্রাপ্ত/উদ্ঘাটিত তথ্য বিশ্লেষণে ঝুঁকি বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিশেষ পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। অবশিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দৈবচয়নের ভিত্তিতে প্রতিবছর কমপক্ষে একটিতে বিশেষ পরিদর্শন করতে হবে এবং উদ্ঘাটিত অনিয়মের বিষয়ে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

মামলা থেকে জানা যায়, ২০২০ সালে বিআইএফসির শেয়ারহোল্ডার ‘টিজমার্ট ইনকরপোরেটেড’ রুহুল আমিনের নেতৃত্বাধীন বিআইএফসির তৎকালীন পরিচালনা পর্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম/আইনপরিপন্থী কর্মকাণ্ড ও বিআইএফসির ফান্ড আত্মসাতের অভিযোগ করে পর্ষদ বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে আমানতকারীরা কোম্পানি আইনে মামলা করেন।

একই মামলায় বিআইএফসির শেয়ারহোল্ডার মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান অপর একটি আলাদা আবেদনেও বিআইএফসির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম/আইনপরিপন্থী কর্মকার ও বিআইএফসির ফান্ড আত্মসাতের অভিযোগ করে তার এবং তার পরিবারের ও মালিকানাধীন কোম্পানির প্রকৃত দায়-দেনা নির্ধারণের জন্য বিআইএফসিতে অডিটর নিয়োগ করার নির্দেশনা প্রার্থনা করেন। পরে ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টের আদেশে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজের মতামতের ভিত্তিতে উচ্চ পর্যায়ের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি তদন্ত করে এ সুপারিশমালা দাখিল করে।

এ বিভাগের আরো খবর