আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'বিএনপি দেশে কোনো নির্বাচন চায় না। তারা ভিন্ন পথে ক্ষমতায় আসতে চায়। তারা আন্দোলন করতে চাইলে বাধা দেব না। তবে দলটি অতীতের মতো আন্দোলনের নামে কোনোরকম নাশকতা করে দেশের ক্ষতি করতে চাইলে জনগণ উপযুক্ত জবাব দেবে।'
শনিবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ ও জাতীয় কমিটির মুলতবি যৌথ সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
গত ২৪ ডিসেম্বর ২২তম জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব আসার পর দলের প্রথম কর্মসূচি বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ায় অনুষ্ঠিত হলো।
উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই যৌথ সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা কাউকে দেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে দেশ চলবে।
‘এই মাটিতে (টুঙ্গিপাড়া) বসে প্রতিজ্ঞা নিচ্ছি যে বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি কেউ যাতে রোধ করতে না পারে তার জন্য আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যন্ত প্রতিটি নেতা-কর্মী সজাগ থাকবে, দৃঢ় থাকবে। তারা যেকোনো অপকর্ম প্রতিরোধ করবে। এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শনিবার টুঙ্গিপাড়ায় দলীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে জাতির পিতার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। ছবি: নিউজবাংলা
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৩ থেকে '১৫ সাল পর্যন্ত যারা দেশে অগ্নি সন্ত্রাস করেছিল, তাদের ঘৃণা জানাতে হবে। তারা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এ দেশে হত্যা, খুন ও গুম জিয়াউর রহমান শুরু করেছিলেন। খালেদা জিয়া ও তার কুলাঙ্গার পুত্র মিলে ২১ আগস্ট থেকে শুরু করে অনেক মানুষ হত্যা এবং অত্যাচার-নির্যাতন করেছেন।
‘আগামীতে যদি তারা একজন মানুষকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে তাহলে যে হাত দিয়ে আগুন দেবে ওই আগুনে তাদের সেই হাত পুড়িয়ে দেয়া হবে। যে হাতে মানুষ খুন করবে তাদের উপযুক্ত শিক্ষা দেয়া হবে। এই কথাটা যেন সবার মনে থাকে। আমরা আছি জনগণের পাশে আর তারা আছে ধ্বংস করতে।’
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি ৩০টি আসনে জয়ী হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা বোধ হয় তাদের মনে থাকে না। ওই নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ২৯টি সিট পেয়েছিল। পরে উপনির্বাচনে একটা পায়। এটাই ছিল তাদের শক্তি। সে জন্য তারা কোনো নির্বাচন চায় না বা ভিন্ন পথে ক্ষমতায় আসতে চায়।’
যৌথ সভায় মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, চিকিৎসা, বিনা মূল্যে করোনার টিকা দেয়াসহ দেশে অবকাঠামো উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তারা বলে আওয়ামী লীগ নাকি দেশের সর্বনাশ করেছে। মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন কি তাদের সর্বনাশ করা? এগুলো কি মানুষের ক্ষতি সাধন করা? একই দিনে ১০০ সেতু এবং ১০০ সড়ক উন্নত ও উদ্বোধন করা কি সর্বনাশ? তাদের জিজ্ঞেস করতে হবে, ক্ষতিটা দেখল কোথায়?’
ভবিষ্যতে গোপালগঞ্জে এলে আগে কোটালিপাড়ায় যাবেন বলে নেতা-কর্মীদের জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের নেতাদের টুঙ্গিপাড়া সফরের অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, ‘আপনাদের সবার দাওয়াত থাকল, যেকোনো সময় চাইলে টুঙ্গিপাড়ায় আসতে পারেন। আমাদের আতিথেয়তা নিতে পারেন। আমাদের দেশের লোক আপনাদের সাদরে গ্রহণ করবে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার টুঙ্গিপাড়ায় নেতাকর্মী ও জনগণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ছবি: নিউজবাংলা
যৌথ সভায় নতুন বছরের দলীয় কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসসহ নানা কর্মসূচি।
এর আগে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের নেতারা।
এছাড়া শেখ হাসিনা শুক্রবার টুঙ্গিপাড়ায় এসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর সড়কপথে খুলনায় গিয়ে মায়ের নামে কেনা সম্পত্তি ঘুরে দেখেন তিনি। সড়কপথে খুলনা থেকে আবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ফিরে নিজ বাসভবনে রাত্ত যাপন করেন বঙ্গবন্ধু-কন্যা।