বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রংপুরে শীত নিবারণ করতে গিয়ে বাড়ছে অগ্নিদগ্ধ রোগীর সংখ্যা

  •    
  • ৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৭:১৭

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক আবদুল হামিদ বলেন, ‘শীতের শুরুতে রংপুর অঞ্চলে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে মানুষ অগ্নিদগ্ধ হন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মারা যান। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে শীতের সময় গ্রামপর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক কাজ করা উচিত।’

হাড়কাপানো শীত আর ঘন কুয়াশায় কাহিল হয়ে পড়েছেন রংপুর অঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষ।বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষরা পড়েছেন নিদারুণ কষ্টে। শীত নিবারণ করতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। গত দুই সপ্তাহে একজনের মৃত্যু এবং ১০ জন ভর্তি হয়েছেন। শীতজনিত রোগীর ভিড় বাড়ছে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডেও।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজার রহমান নিউজবাংলাকে জানান, শনিবার রংপুর অঞ্চলে তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অবস্থা থাকতে পারে আরও কয়েকদিন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিকাল হতেই ঘনকুয়াশায় ঢেকে যায় পুরো এলাকায়। সন্ধ্যার পরেই বেড়ে যায় শীত, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে শীতে জুবুথুবু হয়ে পড়ছে মানুষ। গ্রামে থাকা ছিন্নমূল, অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধদের অবস্থা নাকাল। সকালে সড়ক-মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে দেখা যাচ্ছে।

এদিকে, শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির কারণে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি।

গংগাচড়ার লক্ষিটারী গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এবার খুব শীত ও ঠাণ্ডা। জারোত থাকা যায় না। সন্ধে হইলে জারোতে গাও (শরীর) কাপে। খেতা কম্বল দিয়ে গাও ঢাকলেও কিছু হয়না। আগুন তাপায়াও কিছু হয় না। কষ্ট করি দিন যাওছে।’

ওই গ্রামের আরেক বাসিন্দা মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এবার কেনবা জার (ঠান্ডা) বেশি। এ্যালাও মাগ (মাঘ মাস) মাস আইসে নাই। তাতেই যদি এমন ঠান্ডা হয় তাইলে সামনের মাসোত কি হইবে। বাড়িত থাকি বেরবার (বের হবার) মনায় (মন চায় না) না, কাজ কম কেংকা করি।’

রংপুরের মডার্ণমোগে কথা হয় ট্রাকচালক লতিফুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যখন সড়কে গাড়ি চালাই তখন খুব সাবধানে চালাতে হচ্ছে, গাড়ির সামনে কিছু দেয়া যায় না। ভয় ভয় করেই গাড়ি চালাই। দিনের বেলাতেও লাইট জ্বালাইতে হয়। তবে বেলা ১১টার দিকে লাগে না। আবার পাঁচটার পর লাইট দিবের লাগে।’

রংপুর রেল স্টেশনে থাকেন ৬৫ বছর বয়সী মোসলেসা। তিনি বলেন, ‘বাড়ি হামার তিস্তের চরোত। ছৈলপৈল আছে ওমার করি ওমরা খায়। হামাক কাইও দেখে না। সারাদিন মাসুষের বাসা বাড়িত ভিক করি খাই, আইতোত আসি এটে ঘুমাই। আইতোত খুব ঠাণ্ডা লাগে।’

রংপুর সদরের জানকী ধাপেরহাট এলাকার বাসিন্দা বাবলি বেগম বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার সকালে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে পরনের কাপড়ে আগুন লেগে যায়। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে নেভানোর চেষ্টা করি। ততক্ষণে শরীরের কিছু অংশ আগুনে পুড়ে যায়। বর্তমানে হাসপাতালোত আছি। চিকিৎসা চলোছে, একনা ভালো আছি।’

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মা ফাতেমা বেগম এর বয়স ৬২। সকালে আগুন পোহাতে গিয়ে অসাবধানবশত পরনের কাপড়ে আগুন লেগে যায়। শরীরে

নিচের দিকের অংশ প্রায় ২০ ভাগ দগ্ধ হয়েছে। এরপর দ্রুত রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ দিনে তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০জন। তাদের সবার শরীর ১০ থেকে ৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক আবদুল হামিদ বলেন, ‘শীতের শুরুতে রংপুর অঞ্চলে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে মানুষ অগ্নিদগ্ধ হন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মারা যান। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে শীতের সময় গ্রামপর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক কাজ করা উচিত।’

রংপুর ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন বলেন, ‘এবার শীত মৌসুমে ৫৫ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৬০ হাজার শীতবস্ত্র চেয়ে জরুরি ভিত্তিতে ফ্যাক্স পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই সেগুলো পাব। শীতবস্ত্র পেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেগুলো দেয়া হবে।’

রংপুর জেলা প্রশাসন ড. চিত্র লেখা নাজনীন বলেন, ‘আমি এবং আমাদের প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। ইতোমধ্যে অনেকগুলো জায়গাতেই আমি নিজেই খোঁজ খবর নিয়ে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছি। আমরা আরও কিছু শীতবস্ত্র পেয়েছি যেগুলো বিতরণ করা হচ্ছে এবং হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর