জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপির পদত্যাগের কারণে শূন্য হওয়া ছয়টি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ভোটের আমেজ সবচেয়ে বেশি নিঃসন্দেহে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে।
বিএনপির সিদ্ধান্ত মেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে পদত্যাগ করেও এই আসনে উপনির্বাচনে ভোটের মাঠ ছাড়েননি উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে তিনি লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।
সাত্তার ভূঁইয়া বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এই আসন থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একবার স্বতন্ত্রসহ তিনি ওই আসনের পাঁচবারের সংসদ সদস্য। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে তিনি পরাজিত হন।
ছয়বার নির্বাচন করে তিনি মাত্র একবার পরাজিত হন। তার এমন সিদ্ধান্তে বিএনপির নেতা-কর্মীরাও বিস্মিত, কেউ কেউ ক্ষুব্ধ। তারা এই পদক্ষেপকে দেখছেন দলের সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গের প্রমাণ হিসেবে।
বিএনপি ছেড়েছে বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও ৩, ঠাকুরগাঁও-৩ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়া ভোটের আমেজ সেভাবে নেই কোথাও।
গত ৪ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে উপনির্বাচনে উকিল আবদুস সাত্তার ভুঁইয়ার পক্ষে মনোনয়ন জমা দেন তার ছেলে মাঈনুল হোসেন তুষার। ছবি: নিউজবাংলা
এই আসনটিতে ২০১৮ সালের মতোই টানটান উত্তেজনা। সেবার আওয়ামী লীগ এই আসনে প্রার্থী দেয়নি। সাত্তার ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টির নেতা রেজাউল ইসলাম ভূঞা ছিলেন মহাজোটের প্রার্থী। তবে আওয়ামী লীগের সমর্থনে আগের দুটি নির্বাচনে জয় পাওয়া জিয়াউল হক মৃধা দলের মনোনয়ন না পেয়ে হন স্বতন্ত্র প্রার্থী। আওয়ামী লীগ নেতা মঈন উদ্দিন মঈনও প্রার্থী হন স্বতন্ত্র।
পরে দেখা যায় লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী উড়ে যান ২৭৯ ভোট পেয়ে। লাঙ্গল না পেয়ে মৃধা পান ৩৯ হাজারের বেশি ভোট। সাত্তার জেতেন ৮৩ হাজার ৯৯৭ ভোট পেয়ে। মঈন পান ৭৫ হাজার ৪১৯ ভোট।
এবারও মার্কা পাননি মৃধা আর মঈন। কিন্তু প্রার্থী হয়েছেন। ভোটে লড়বেন মৃধাও। জাতীয় পার্টির প্রার্থিতা নিয়ে হয়েছে নাটকীয়তা। প্রথমে মনোনয় পান রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। পরে পাল্টে প্রার্থী করা হয় আবদুল হামিদ ভাসানীকে।
তবে চমক নিঃসন্দেহে সাত্তার উকিলের প্রার্থী হওয়া। ১১ ডিসেম্বর বিএনপির অন্য পাঁচজনের সঙ্গে গিয়ে স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে আসার পর ভোটে লড়তে বিএনপিও ছেড়েছেন তিনি।
সাত্তারের এই প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রেও উদ্বেগ স্পষ্ট। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবাধায়ক সরকার না হলে ২০১৪ সালের মতোই আন্দোলনে গিয়ে ভোট বর্জনের ঘোষণা আছে দলটির। আগের দুটি জাতীয় নির্বাচনের আগেও একই দাবি ছিল। দুইবারই আলোচনার জন্য ডেকেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু এবার পাত্তাই দিচ্ছে না।
বরং ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বক্তব্য এসেছে যে বিএনপি ভোটে না এলে দলের অনেকেই আসবে। এমনকি বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যও বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে সতর্ক করেছেন দলে।
ছয়টি নির্বাচনে যারা সাত্তারের হয়ে কাজ করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই ক্ষুব্ধ। তবে তার পাশেও আছেন বহুজন।
বিএনপির সাবেক এমপি ভোটে লড়তে মরিয়া হয়ে যাওয়ার পর সোমবার বিকেলে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে জেলা, সরাইল ও আশুগঞ্জ বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া দলের সঙ্গে চূড়ান্ত বেইমানি করেছেন।’
সাত্তার ভূঁইয়া দলের একাংশের সমর্থন না পেলে ভোটে মঈন, মৃধার মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হয় নাকি জাতীয় পার্টির প্রার্থীও ভালো ভোট পান, সেই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নে জবাব দেবে কেবল ১ ফেব্রুয়ারি।
বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে জানতে সাত্তারকে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি।