নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি নূর হোসেনকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখতে আদালতে আবেদন করেছেন তার আইনজীবী। আদালত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে পরে।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে নূর হোসেনকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। অসুস্থার কারণে তাকে সাময়িক সময়ের জন্য পাঠানো হয় ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে।
বৃহস্পতিবার সকালে মাদক ও অস্ত্র মামলায় নূর হোসেনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য নিতে দিন ধার্য ছিলো। এ জন্য দুইদিন আগেই কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে নারায়ণগঞ্জের কারাগারে আনা হয়। সেখান থেকে আদালতের হাজতখানা ও তারপর বিচারকের সামনে হাজির করার কথা ছিল।
তবে সকাল গড়িয়ে বিকেল হলেও অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শাম্মী আক্তারের আদালতে দুটি মামলার কোনও স্বাক্ষী হাজির হননি। তবে মামলার শুনানী হয়েছে। সেখানে নূর হোসেনের আইনজীবী আদালতে নতুন এক আবেদন করেন।
অসুস্থ্যতার কারণ দেখিয়ে নূর হোসেনকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখতে আদালতে আবেদন জানান আইনজীবী। আদালত ওই আবেদন নথিভূক্ত করে পরবর্তী শুনানিতে সিদ্ধান্ত নেয়ার আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জাসমীন আহমেদ নিউজবাংলাকে জানান, ২০১৪ সালের ৯ মে সিদ্বিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকার ট্রাক সমিতির অফিসের পেছনে অভিযান চালিয়ে পুলিশ বিপুল পরিমান মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করে। এ ঘটনায় মাদক ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা হয় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায়।
পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে ওই সব মাদক ও অস্ত্র কাউন্সিলর নূর হোসেন ও তার সহযোগীদের। দুটি মামলায় নূর হোসেন ও তার ভাতিজা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র শাহ জালাল বাদলসহ ১৩ জনকে আসামি করে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ।
বৃহস্পতিবার এ দুটি মামলায় স্বাক্ষ্য নেয়ার দিন ছিল। তবে সাক্ষীরা না আসায় সাক্ষ্যগ্রহন হয়নি। এসময় আসামী নূর হোসেনের আইনজীবী আদালতে আবেদন জানিয়েছেন তাকে কাশিমপুর কারাগারে না রেখে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখার জন্য। এ জন্য তিনি নূর হোসেনের অসুস্থতার কারণ দেখিয়েছেন। আদালত সেটি নথিভূক্ত করেছেন, তবে সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে জানাবেন।
নূর হোসেনের আইনজীবী ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেহেতু নূর হোসেনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার আদালতে একাধিক মামলা চলমান। সেহেতু তাকে প্রায়ই আদালতে হাজির করতে হয়। নূর হোসেনের অনেক শারীরিক সমস্যা আছে, এ কারণে তাকে কাশিমপুর থেকে আনতে কষ্ট হয়। তাই তাকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে রাখতে আবেদন জানিয়েছি।’
বৃহস্পতিবার স্বাক্ষ্য না হওয়ায় নূর হোসেনকে নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে দ্রুত কেরানীগঞ্জ কারাগারে নেয়া হবে বলে জানান নারায়ণগঞ্জের আদালত পুলিশের পরির্দশক আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘কড়া নিরাপত্তায় নূর হোসেনকে নারায়ণগঞ্জের আদালতে আনা হয়েছিল, শুনানি শেষে আবার নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে দ্রুত কেরানীগঞ্জ কারাগারে নেয়া হবে। আসামির বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র ছাড়াও দুদকের মামলা আছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি মামলার শুনানি থাকায় সেদিন তাকে ফের আদালতে আনা হবে।’
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোড থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭ জন অপহৃত হন। ৩০ ও ৩১ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
‘সেভেন মার্ডার মামলা’ নামে পরিচিত এ মামলার রায়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালত নূর হোসেন, র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।