বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘আমাগোর আর বাঁচনের উপায় নাই’

  •    
  • ৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৯:২৯

দলদলি চা-বাগানের শ্রমিক পরিমল বলেন, ‘গত বছর একটা কম্বল পেয়েছিলাম। কিন্তু এবার শীত এত বেশি যে এই কম্বল দিয়ে আটকানো যাচ্ছে না। আবার লজ্জায় কারও কাছে চাইতেও পারছি না। কারণ, কিছুদিন আগেই মানুষজন আমার ঘর বানিয়ে দিয়েছে।’

‘আমাগোর আর বাঁচনের উপায় নাই। গরিবরে বাইশ্যাও (বর্ষা) মারে, ঠাইয়াও (ঠান্ডা) মারে। পানিতে আমার সব ভাসাইয়া নিছিল। কিছু কিছু আবার জোগাড় করতেছি। এখন শীতের কারণে ঘর থেকে বাইরে যাওয়া যায় না। তাই কামকাজ বন্ধ।’

বন্যায় ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই শীতের দাপটে কাহিল অবস্থা সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বর্ণি এলাকার দিনমজুর আব্দুর রহিমের। কনকনে শীতে নিজের করুণদশার কথা এভাবেই তুলে ধরেন তিনি।

ভয়াবহ বন্যার রেশ না কাটতে সিলেট পড়েছে হাড়কাঁপানো শীতের কবলে।পাহাড়ি এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। কঠিন সময় পার করছে ছিন্নমূল মানুষ, বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। গেল বছর সিলেটের ওপর দিয়ে বয়ে যায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। ধান, বাড়িঘর আর সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে বহু লোক। বন্যার ক্ষত এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি এই অঞ্চলের মানুষ। এর মধ্যে শুরু হয়েছে হাড়কাঁপানো শৈত্যপ্রবাহ।

কনকনে শীতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। বিশেষত হাওর ও চা-বাগান এলাকার দরিদ্র শ্রমিকরা সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র নেই তাদের অনেকের।

গত জুনের বন্যায় ঘর ভেসে গেছে দলদলি চা-বাগানের শ্রমিক পরিমল দাসের। নানা জনের সহযোগিতায় নতুন ঘর নির্মাণ করেছেন। এবার শীতের দুর্যোগে আর কারও কাছে সাহায্য চাইতে পারছেন না তিনি।

পরিমল বলেন, ‘গত বছর একটা কম্বল পেয়েছিলাম। কিন্তু এবার শীত এত বেশি যে এ কম্বল দিয়ে আটকানো যাচ্ছে না। আবার লজ্জায় কারও কাছে চাইতেও পারছি না। কারণ কিছুদিন আগেই মানুষজন আমার ঘর বানিয়ে দিয়েছে।’

সিলেটে কনকনে শীতে কষ্ট পাচ্ছে ছিন্নমূল মানুষ। ছবি: নিউজবাংলা

তীব্র শীতের কারণে সকালে কাজে যেতে পারছেন না জানিয়ে খাদিম চা-বাগানের শ্রমিক সীতা বাউড়ি।

তিনি বলেন, ‘ঘরে থাকলে তো লেপের নিচে থাকি। কিন্তু বাইরে বের হওয়ার মতো শীতের কাপড় নেই। একটা পুরোনো চাদর আছে, তা দিয়ে শীত আটকায় না। তাই সকালে কাজে যেতে পারি না। একটু বেলা করে যাই।’

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকেই তীব্র শীত পড়েছে সিলেটে। দিনভর দেখা মিলছে না সূর্যের। কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে গ্রাম থেকে শহর। এই অবস্থা আরও দশ দিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

সিলেট বিভাগে সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছে মৌলভীবাজের শ্রীমঙ্গলে। চা-বাগানবেষ্টিত এই উপজেলায় মঙ্গলবার তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি ও বুধবার ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই দুই দিনই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল সেখানে। বৃহস্পতিবার সিলেটে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘সিলেটে আগামী ১০ দিন তাপমাত্রা ১৪/১৫ ডিগ্রির মধ্যে থাকবে। এ সময়ে ঘন কুয়াশাও থাকবে। কুয়াশা থাকায় শীতের অনুভূতি বেশি থাকলেও তাপমাত্রা বাড়বে। দেরিতে হলেও আকাশে সূর্যের দেখা মিলবে।’

বৃহস্পতিবার সকালে সিলেট নগরের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘন কুয়াশার কারণে ঝাপসা চারপাশ। হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। সকালে নগরে যান ও জন চলাচল তুলনামূলক কম।

সিলেটের গোয়াইনঘাটের শ্রীপুর পাথর কোয়ারির শ্রমিক আসাদ আহমদ বলেন, ‘শীতে নদীর পানি বরফের মতো হয়ে যায়। তারপরও জীবিকার তাগিদে পানিতে নেমে কাজ করতে হয়।’

নদীর ঠান্ডা পানিতে কাজ করে দুদিন ধরে জ্বর-সর্দিতে ভুগছেন বলেও জানান আসাদ।

সিলেটে ব্যাপকভাবে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। হাসপাতালগুলোতে জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগী সংখ্যা বেড়েছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু।

সিলেটের অতিরিক্ত সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত বলেন, ‘শীতের তীব্রতার কারণে সিলেটের হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেড়েছে। শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। জেলার সব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে রোগীদের সেবা নিশ্চিতে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।’

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘শীতের প্রকোপে নিম্ন আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছেন। সরকার ও প্রশাসন থেকে দুর্দশাগ্রস্তদের সব ধরণের সহয়তা করা হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় শীতবস্ত্রও বিতরণ করা হচ্ছে। ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন।’

এ বিভাগের আরো খবর