গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচনে তিন প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। মোট বৈধ ভোটের আট ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ১৬ হাজার ২০২ ভোটের কম পাওয়ায় তাদের জামানত বাজেয়াপ্তের এ সিদ্ধান্ত হয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘তিন প্রার্থীর জামানত বিধি অনুযায়ী বাজেয়াপ্ত হবে। জামানত হারানো প্রার্থীরা হলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মো. মাহবুবুর রহমান, নাহিদুজ্জামান নিশাদ এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশের জাহাঙ্গীর আলম।’
এই আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৩৯ হাজার ৪ জন। এরমধ্যে ভোট পড়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ৬১২টি।
এর মধ্যে জামানত হারানো স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মো. মাহবুবুর রহমান পেয়েছেন দুই হাজার ৯৫০ ভোট, নাহিদুজ্জামান নিশাদ পেয়েছেন এক হাজার ৬৪০ ভোট এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশের জাহাঙ্গীর আলম পেয়েছেন এক হাজার ৭৯৬ ভোট।
এর আগে, বুধবার রাতে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুম থেকে এই ফলাফল ঘোষণা করেন। ফলাফলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন ৭৮ হাজার ২৮৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির (জাপা) গোলাম শহীদ রনজু ভোট পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৭৫২ ভোট।
চরম অনিয়মের কারণে বন্ধ ঘোষিত গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনে দ্বিতীয় দফায় বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। যা চলে বিরতিহীনভাবে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।
গাইবান্ধা-৫ আসনটি ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ দুই উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে মোট ভোটার তিন লাখ ৩৯ হাজার ৪ জন। ১৪৫টি কেন্দ্রে এসব ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
নির্বাচনে পাঁচ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মাঠে সক্রিয় ছিলেন আওয়ামী লীগের মাহমুদ হাসান রিপন (নৌকা) ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী (জাপা) এএইচএম গোলাম শহিদ রঞ্জু (লাঙ্গল)। ভোটের মাঠে প্রচারণায় দেখা যায়নি বিকল্পধারা বাংলাদেশের জাহাঙ্গীর আলম (কুলা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মাহবুবুর রহমানকে (ট্রাক)।
এছাড়া গত ২৫ ডিসেম্বর অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ (আপেল) বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট কারচুপির আশঙ্কায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
গাইবান্ধা-৫ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী গত ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আসনটিতে ১২ অক্টোবর উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলাকালে প্রথমে গোপন কক্ষে একাধিক ব্যক্তি প্রবেশ করায় ভরতখালি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, ফুলছড়ি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং সাঘাটা উপজেলার রামনগর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে দফায় দফায় ৫১টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করে ইসি।
নির্বাচনের অনিয়ম তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি ৫১টি ভোটকেন্দ্রের ঘটনা তদন্ত করে গত ২৭ অক্টোবর ইসিকে প্রতিবেদন দেয়। পরে বাকি ৯৪টি ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম ছিল কি না, তা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয় ইসি। ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় কমিটি ওই প্রতিবেদনও জমা দেয়।
তদন্তে দায়িত্ব অবহেলার প্রমাণ মেলায় রিটার্নিং কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের পাঁচ উপপরিদর্শক (এসআই), ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাসহ ১৩৪ জনের বিরুদ্ধে বরখাস্তসহ নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ আইন অনুসারে বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তির সিদ্ধান্ত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
তদন্ত শেষে গত ৬ নভেম্বর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ৪ জানুয়ারি গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম।