ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আদালতের কর্মচারীদের কর্মবিরতির পর এবার জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের অপসারণ দাবিতে কোর্ট বর্জন করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতি।
আইনজীবীরা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কোর্ট বর্জন করেন। আগামী রোববার ও সোমবারও কোর্ট বর্জনের কর্মসূচি দিয়েছেন তারা।
এর আগে বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীদের অসৌজন্যমূলক আচরণ, বিচারিক কাজে হস্তক্ষেপ ও কর্মচারীদের মারধরের অভিযোগে বুধবার কর্মবিরতি পালন করে জেলা বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন।
বৃহস্পতিবার আদালত প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ১০টা থেকে আইনজীবী সমিতির ভবনের সামনে আইনজীবীরা বিক্ষোভ করছেন। আদালতের বিভিন্ন কক্ষে আইনজীবীরা না যাওয়ায় কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি।
তবে কর্মচারীরা তাদের অনির্দিষ্ট কর্মবিরতি স্থগিত করায় তাদের নিজ নিজ কক্ষে কাজ করতে দেখা গেছে।
আদালত চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ঘটনার প্রেক্ষাপট
এজলাস চলাকালে জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১–এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে আইনজীবীদের বাদানুবাদের একটি ভিডিও ভাইরাল হয় ফেসবুকে। ঘটনাটি গত ২ জানুয়ারির।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর ভূঁইয়াসহ কয়েকজন আইনজীবী বিচারক মোহাম্মদ ফারুককে গালিগালাজ করছেন। তবে ভিডিওটি এডিট করা বলে দাবি করেন তানভীর ভূঁইয়া।
ঘটনার সূত্রপাত জেলা জজ আদালতের শেষ কার্যদিবসে গত ১ ডিসেম্বর। ওই দিন বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালতে কয়েকজন আইনজীবী মামলা করলে দাখিলে দেরি হওয়ার কারণ দেখিয়ে বিচারক মামলাগুলো গ্রহণ করেননি। পরে এজলাসে গিয়ে অনুরোধ করেন আইনজীবীরা। তখন বিচারক তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
পরে বন্ধ থাকার পর আদালত খুললে বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীদের বাদানুবাদের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে আইনজীবী ও আদালতের কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এর মধ্যেই বিচারককে গালিগালাজের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
তবে ঘটনার শুরু আদালতের নাজিরকে নিয়ে জানিয়ে আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর ভুঁইয়া জানান, ঘটনার সূত্রপাত আদালতের নাজির মমিনুল ইসলামকে নিয়ে। তার বিরুদ্ধে কোর্ট ফি ও স্ট্যাম্প জালিয়াতের অভিযোগ রয়েছে। মমিনুলের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারকের কাছে আইনজীবীরা অভিযোগ করেন। তবে তার কোনো বিচার হয়নি।
তানভীর ভুঁইয়ার অভিযোগ, কোর্ট ফি ও স্ট্যাম্প জালিয়াতির মাধ্যমে আইনজীবীদের হয়রানি করে আসছেন মমিনুল।
আদালতের কর্মচারীদের কর্মবিরতির জন্য জেলা জজ শারমিন নিগারকে দায়ী করেন তিনি।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অভিযোগ করে বলেন, ‘জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শারমিন নিগারকে মমিনুলের বিষয়টি জানালে তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। উল্টো বিচারকের সঙ্গে অসদাচারণের অভিযোগ এনে কর্মচারীদের দিয়ে কর্মবিরতি করান। এতে আইনজীবীরা কোর্ট বজনের পদক্ষেপ নেন।’
বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীদের বাদানুবাদের ভিডিওটির বিষয়ে তানভীর ভুঁইয়া দাবি করেন, ভিডিওটি এডিট করা। পুরোটাই বানোয়াট।
এ বিষয়ে বিচারক মো. ফারুকের বরাত দিয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল জানান, ওইদিন বিকেলে এজলাসে দুই থেকে তিন জন আইনজীবী নতুন করে মামলা নিতে চাপ সৃষ্টি করেন। নিয়ম অনুসরণ করে মামলা জমা দেওয়ার পরামর্শ দেন বিচারক। কারণ আইনানুযায়ী সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে বিচারকের এজলাসে ওঠার আগেই আদালতে মামলা দাখিল করতে হয়। কিন্তু বিকেল চারটার দিকে আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিচারকের খাস কামরায় গিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের কর্মবিরতির বিষয়ে তিনি বলেন, সেবাগ্রহীতাদের কথা চিন্তা করে কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়েছে। তবে আইনজীবীদের কোর্ট বর্জনের কারণে বিচারকাজ হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির ব্যাপারে তিনি বলেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে যে আচরণগুলো করা হচ্ছিল সেটি বিচারকের উদ্দেশে। গত ২ জানুয়ারি আইনজীবীরা কোর্ট বর্জন করেন। তবে বিচারক মো. ফারুক কোর্টে উঠলে তার সঙ্গে অসদাচারণ করেন তারা। সেদিনের ভিডিও পরে ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় বিচার বিভাগ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে জানান তিনি।
এদিকে বুধবার নাজির থেকে সরিয়ে মমিনুলকে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে প্রেষণে সেরেস্তাদারের দায়িত্বে দেয়া হয়েছে।