নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিরোধী দলগুলোর জোরালো আন্দোলনের হুমকির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগের আন্দোলনে বেপরোয়া পেট্রলবোমা হামলার কথা স্মরণ করলেন। বললেন, আর যেন কেউ সেটি করতে না পারে।
রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর হতে পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দিয়ে বুধবার এসব কথা বলেন সরকারপ্রধান। পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩-এর দ্বিতীয় দিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভবিষ্যতে যাতে কেউ আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে না পারে, কেউ যেন আর ঐ অগ্নি সন্ত্রাস করার সাহস না পায়, মানুষের জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত করতে না পারে।
‘হ্যাঁ, আন্দোলন সংগ্রাম করবে, জনগণকে নিয়ে করবে। কিন্তু সেখানে যদি কোনো ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা সবাইকে নিতে হবে।’
আগের দিন রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন করেও প্রধানমন্ত্রী এই প্রসঙ্গটি আনেন। সেদিন তিনি ২০১৩-১৪ সালের মতো রাজনৈতিক সহিংসতা যেন দেশে আর তৈরি না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেন।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে একটি রিট আবেদনের শুনানি শেষে ২০১১ সালের প্রথম প্রান্তিকে উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণার পর ওই বছর নির্বাচিত সরকারের অধীনে ভোটের ব্যবস্থা ফেরায় আওয়ামী লীগ সরকার।
এর প্রতিবাদে ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। সেই সঙ্গে সেই নির্বাচন বানচালে যায় আন্দোলনে। তবে বিরোধীদের বর্জনের মুখে একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় ফেরে আওয়ামী লীগ।
তবে আওয়ামী লীগ সরকার মেয়াদ পূর্তি করে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন দেয়। সেই নির্বাচনের আগে আবার আন্দোলনের ঘোষণা দিলেও তাতে অংশ নেয় বিএনপি। ২০-দলীয় জোটের পাশাপাশি গড়ে তোলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে আরও একটি জোট।
তবে সেই নির্বাচনে আগের রাতেই ভোট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ এনে আবার তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ফিরে গেছে। আর আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধীদের এই দাবি নাকচ করে এমনকি আলোচনায় না বসার কথাও বলছে। তারা বলছে, উচ্চ আদালত এবং জাতীয় সংসদ- দুই জায়গাতেই তত্ত্বাবধায়কের বিষয়টির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। সেটি ফেরার আর সুযোগ নেই।
সরকার এবং বিরোধী পক্ষ যদি এই অবস্থানে থাকে, তাহলে ২০১৩-১৪ এবং ২০১৫ সালের মতো সংঘাতপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি আবার ফিরে আসে কি না, সেই আশঙ্কার কথাও বলাবলি হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশের উন্নতি হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশে যতটুকু উন্নতি আমরা করেছি, এগুলো এমনি এমনি আসেননি। এর জন্য আমাদের শ্রম দিতে হয়েছে, কষ্ট করতে হয়েছে। আজকের বাংলাদেশে আমরা একটা বিরাট পরিবর্তন আনতে পেরেছি। ... আমরা নিজেরাই শুধু মুখে বলি না। আজকে বিশ্বব্যাপী কিন্তু বাংলাদেশ প্রশংসিত।’
এই অগ্রযাত্রা যেন থেমে না যায়, সেটিই চাইছেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আমি সবাইকে বলব, এই অগ্রযাত্রা কেউ যেন ব্যাহত করতে না পারে। এইটুকুই আমার আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে। যে যে দল, মত অনেক কিছু থাকতে পারে, কিন্তু দেশের স্বার্থে, মানুষের কল্যাণে, দেশের কল্যাণে, দেশের উন্নয়নে কোন কাজ যেন কেউ ধ্বংস করতে না পারে, কোনো কাজে যেন কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে, কোনো ক্ষেত্রে যেন আমাদের এই অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করতে না পারে।’
দেশের অগ্রযাত্রায় পুলিশের বিরাট ভূমিকা রয়েছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘অনেক দুর্যোগ এসেছে, মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ, সেগুলো আপনারা কঠোর হস্তে দমন করেছেন, জঙ্গিবাদ দমন করেছেন, পাশাপাশি আমাদের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রেখেছেন।
‘একটা দেশের আইনশৃঙ্খলা হচ্ছে সবচেয়ে বড়, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই আইন-শৃঙ্খলা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা, এ দায়িত্ব কিন্তু পুলিশ বাহিনীকেই করতে হয়। আসলে পুলিশ বাহিনীর ওপর দায়িত্বটা বেশি।’
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খানও বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।