কবি নজরুলের সুয্যিমামা জাগার আগে ঘুম থেকে উঠতে হলে ভোরেই জাগতে হবে? পৌষের শেষে এসে রাজধানীর যে চিত্র, তাতে চিরাচরিত এই বিষয়টি যেন নতুন করে ভাবতে হবে।
তবে এমন না যে, মামা এখনও ঘুমিয়ে। সে আড়মোড়া ভেঙেছে সময়মতোই। তবে পৌষের কুয়াশার চাদর তাকে দেখা দিতে দিচ্ছে না।
পৌষের মাঝামাঝি সময়েই শীত জেঁকে বসেছে। সূর্যের দেখা না মেলায় দিনের উত্তাপ কমায় চারদিকে জবুথবু অবস্থা। এরই মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে ঘন কুয়াশায় দুপুরবেলাতেও অন্ধকার অবস্থা বিরাজ করে।
রাজধানীর তাপমাত্রা কাগজ-কলমে খুব একটা না নামলেও হিমেল বাতাসের কারণে শীত যেন শরীরে কামড় বসাচ্ছে।
বুধবার সূর্যের দেখা মেলেনি বললেই চলে। সন্ধ্যার পর নগরের পথঘাটও অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায়। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতের তীব্রতা বাড়তে থাকে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসায় দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীত অনুভূত হওয়া অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বুধবার সূর্যোদয় হয়েছে সকাল ৬টা বেজে ৪২ মিনিটে। তবে সূর্যের দেখা মেলেনি সারা দিনেও। ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে চারপাশ। যতটুকু আলো এসেছে, তাতে অবশ্য আঁধার কেটে দৃষ্টির বাধা দূর হয়েছে।
শীতের তীব্রতা অবশ্য খুব একটা বেশি বলা যাবে না। যদিও আগের দিনের চেয়ে তাপমাত্রা আরেকটু কমেছে। মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দুপুরেও সূর্যের তাপ না পড়ায় ভোরের চেয়ে দুপুরের তাপমাত্রার পার্থক্য খুব বেশি নয়। তখন পারদে ওঠে ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি। আগের দিন একই সময়ে যা ছিল ১৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি। সোমবার এই তাপমাত্রা ছিল ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তবে তাপমাত্রার যে অনুভূতি তা আরও খানিকটা কম, ১২ ডিগ্রির কাছাকাছি।
কুয়াশার চাদরে ঢাকা চারপাশে বাতাসের ঝাপটা বাড়িয়ে দিয়েছে শীতের অনুভূতি।
দুপুরেও সূর্যের তাপ না পড়ায় ভোরের চেয়ে দুপুরের তাপমাত্রার পার্থক্য খুব বেশি নয়
শীতের অনুভূতির আরও একটি কারণ আছে। ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে ব্যবধান বেশ কম। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলিসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা তরিফুল কবির নেওয়াজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই অবস্থা আরও তিন থেকে চার দিন অব্যাহত থাকবে।’
তবে শীত বাড়লেও দেশে কোনো শৈত্যপ্রবাহ নেই বলে জানিয়েছেন এই আবহাওয়াবিদ। বলেছেন, এক দিনে তাপমাত্রা ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি কমে যাওয়ায় মানুষের অনভ্যস্ততার কারণে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভারতের দিল্লি, উত্তর প্রদেশ ও বিহার থেকে ঘন কুয়াশা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ফলে দিনের তাপমাত্রা কমে এসেছে।’
ঢাকা অবশ্য দেশের সবচেয়ে শীতল জায়গা নয়। আগের দিনের মতো এই ‘মুকুট’ আজও উঠেছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের মাথায়। আগের দিনের চেয়ে শূন্য দশমিক ৫ ডিগ্রি বাড়লেও ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সেখানে কাঁপুনি ধরাচ্ছে গায়ে।
ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
সেখানে অবশ্য সর্বোচ্চ আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে ব্যবধান বিস্তর। চা-বাগান ঘেরা জনপদে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ২৬ ডিগ্রি।
এদিন দেশের উষ্ণতম স্থান ছিল কক্সবাজারের টেকনাফ। উপকূলীয় এই জনপদে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ২৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল অবশ্য ঢাকার চেয়ে কম, ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি।
সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে।
ফ্লাইট ওঠা-নামায় বিঘ্ন
ঘন কুয়াশার কারণে রাজধানীতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠা-নামায় বিঘ্ন ঘটছে।
বুধবার সকাল থেকে একটি ফ্লাইটকে ভারতের হায়দ্রাবাদে ডাইভার্ট করা হয়েছে। আর নির্ধারিত সময়ে উড়াল দিতে পারেনি অন্তত সাতটি ফ্লাইট।
বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘কুয়াশার কারণে সাতটি এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিলম্বে ছাড়তে হয়েছে। এগুলো হলো জাজিরা এয়ার, ইউএস বাংলা, এয়ার এরাবিয়া, ফ্লাই দুবাই, কাতার এয়ারওয়েজ, ওমান এয়ার এবং ইন্ডিগো এয়ারলাইনস।
তবে কোনো ফ্লাইটকেই যাত্রা বাতিল করতে হয়নি। সব ফ্লাইটই নির্ধারিত সময়ের পর পরিচালিত হয়েছে।’