৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘিরে বছরব্যাপী কর্মসূচী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। দেশের ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত অনাবাদি জমিতে শাক-সবজি-ফল চাষ, মাছ ও গৃহপালিত পশুপালনের উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনটি। ছাত্রলীগ বলছে, প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশেই এসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে মঙ্গলবার দুপুরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বছরব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করে ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য- ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দৃশ্যমান, লক্ষ্য এবার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ।’
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের অ্যাসেম্বলি হলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
তিনি বলেন, ‘সময়ের প্রয়োজনে আজ থেকে ৭৫ বছর আগে বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তির মহান নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, বর্তমানেও সেই ছাত্রলীগ সময়ের প্রয়োজনে নিজের সর্বোচ্চটুকু বিলিয়ে দেয়ার ব্রতকে ধারণ করে পথ চলছে।
‘দেশের প্রতিটি প্রজন্মে, প্রতিটি তারুণ্যে, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অনুভূতিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শ্রেষ্ঠতম স্থানে অবস্থান করেছে, করছে এবং আগামীতেও অবধারিতভাবে করবে। তাই, ছাত্রসমাজ ও তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশরত্ন শেখ হাসিনার পরিকল্পিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশের’ নেতৃত্ব দিবে ছাত্রলীগ, ৭৫তম বর্ষপূর্তিতে এটিই আমাদের সংকল্প।’
কর্মসূচির বিষয়ে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘৪ জানুয়ারি বুধবার সকাল ৬টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৮টায় ধানমন্ডিস্থ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, সাড়ে ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন এবং বিকেল ৩টায় শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।’
অন্যান্য বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনই শোভাযাত্রা বের করে ছাত্রলীগ। তবে এবার ৬ জানুয়ারি শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় হবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ সমুন্নত রাখা, ঢাকা শহরের জ্যাম, শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরীক্ষা এবং গণজীবনের স্বাভাবিক অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে আমরা আমাদের র্যালিটি শুক্রবার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এ ছাড়া ৫-৮ জানুয়ারি রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, স্বেচ্ছায় রক্তদান ও সংগৃহীত রক্ত বিতরণ আর শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করার উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।
বছরব্যাপী আরও যেসব কর্মসূচি
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশের ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত অনাবাদি জমিতে শাক-সবজি-ফল চাষ, মাছ ও গৃহপালিত পশুপালন ইত্যাদি উদ্যোগ গ্রহণ, প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধ ছাত্রসমাজ’ শীর্ষক মতবিনিময়, কনসার্ট ফর স্মার্ট বাংলাদেশ আয়োজন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পুনর্মিলনী, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ: গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭৫ বছর’ শীর্ষক স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ, স্মার্ট বাংলাদেশ আইডিয়া কনটেস্ট, সকল সাংগঠনিক ইউনিটের দলীয় কার্যালয়ে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে দেশব্যাপী ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে স্মার্ট বাংলাদেশের প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক প্রতিযোগিতা ও জাতীয়ভাবে স্মার্ট ইয়ুথ ক্যাম্প আয়োজন।’
‘দেশরত্ন শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রা নিয়ে ২ মিনিটের শর্ট ফিল্ম প্রতিযোগীতার আয়োজন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ‘ডেভেলপমেন্ট কুইজ’ আয়োজন, নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও শেখ হাসিনা’ শীর্ষক বক্তব্য প্রতিযোগিতা, ‘সজীব ওয়াজেদ জয় প্রোগ্রামিং কন্টেস্ট’, স্মার্ট বাংলাদেশ ও স্মার্ট ক্যাম্পাসের উপর আন্তর্জাতিক একাডেমিক কনফারেন্স, স্মার্ট বাংলাদেশ অলিম্পিয়াড, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরষ্কারপ্রাপ্ত মেধাবী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চা-চক্র এবং
‘স্মার্ট বাংলাদেশ: আওয়ার কান্ট্রি, আওয়ার ড্রিম’ শীর্ষক পোস্টার প্রেজেন্টেশন কর্মসূচি।’
বছরব্যাপী এসব কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনে প্রতিটি সাংগঠনিক ইউনিটকে নির্দেশনা এবং ছাত্রসমাজকে নিজেদের মেধার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি।
শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করা দেশপ্রেমের অংশ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করা দেশপ্রেমের অংশ হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে পুনর্নির্বাচিত করাকে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ নিজেদের নৈতিক দায়িত্ব মনে করছে। দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করা আমাদের দেশপ্রেমের অংশ হয়ে পড়েছে। এই দেশপ্রেমের অংশ হিসেবে আমরা দেশরত্নের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে চাই।’
সাদ্দাম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মাধ্যমে আমরা একটা লড়াই করার শপথ গ্রহণ করতে চাই। আর এই লড়াইয়ের শেষ আমরা দেখতে চাই। যারা জাতির পিতার হত্যাকারী, বঙ্গবন্ধু তনয়াকে হত্যার চেষ্টা করেছে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে এবং যারা দুর্নীতিকে বাংলাদেশে রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করিয়েছে, সেই দুর্নীতিবাজদদের যারা পুনর্বাসন করেছে, গণতন্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে যারা ইতোমধ্যে মানুষ হত্যা করেছে, সেই অপশক্তির বিনাশ বাংলার মাটি থেকে আমরা নিশ্চিত করেই ছাড়বো।
‘বিএনপি জামায়াতের পলিটিক্যাল ডেথ সার্টিফিকেট নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিরাপদ নয়। লাখও শহীদের রক্তের উত্তারাধিকারের প্রতি আমাদের যে স্বপ্ন রয়েছে সেই স্বপ্ন নিরাপদ নয়। আজকে আমরা প্রত্যয় ব্যক্ত করছি, ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি জামায়াতের রাজনৈতিক মৃত্যুঘণ্টা আমরা নিশ্চিত করবোই।