বিচারিক আদালতে চার দফা প্রত্যাখ্যাত হয়ে উচ্চ আদালতে জামিন পেলেও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের মুক্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এর কারণ, হাইকোর্ট দুই নেতাকে ছয় মাসের জামিন দিলেও তা ঠেকাতে আপিলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আগামীকাল বুধবার আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনির।
মঙ্গলবার বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে ছয় মাসের জামিন দেয়ার পরপর এই সিদ্ধান্ত জানানো হলো।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জয়নুল আবেদীন। সঙ্গে ছিলেন বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, কামরুল ইসলাম সজল, সগীর হোসেন লিওনসহ বিএনপির আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনির।
পরে জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত ছয় মাসের অন্তবর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন। এ জামিনের ফলে তাদের মুক্তি কোনো বাধা নেই।’
এরপরেই রাষ্ট্রপক্ষ এই সিদ্ধান্ত জানায়।
গত ৭ ডিসেম্বর মির্জা আব্বার ঘোষণা করেন, তাদের ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ অনুমতি না পেলেও নয়াপল্টনেই হবে। এরপর পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়
এর আগে বিচারিক আদালতে দুই বিএনপি নেতার আবেদন চার দফা নাকচ হয়। গত ২১ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আছাদুজ্জামান, গত ১৫ ডিসম্বের মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন, ১২ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম শফিউদ্দিন এবং ৯ ডিসেম্বর জামিন আবেদন নাকচ করেন ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিম।
গত ৮ ডিসেম্বর মির্জা ফখরুল বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে উত্তরার বাসায় ফিরলে গভীর রাতে তাকে আটক করে পুলিশ। কাছাকাছি সময়ে শাহজাহানপুরের বাসা থেকে আটক করা হয় মির্জা আব্বাসকে।
দুইজনকেই আগের দিন নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ অনুমতি ছাড়াই নয়াপল্টনে করার ঘোষণা দেয়ার পর পর গত ৭ ডিসেম্বর দলীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে মকবুল হোসেন নামে একজন নিহত এবং আহত হন অনেকে।
সংঘর্ষের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে দলটির অনেক নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ। সেখান থেকে চাল, খিচুড়ি ও ১৫টি ককটেলের পাশাপাশি বোতলজাত পানি ও টাকা উদ্ধারের কথা জানায় পুলিশ।
গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় পরে মির্জা ফখরুল ও আব্বাসকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়
সংঘর্ষের পর বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ফখরুল দলীয় কার্যালয়ের সামনের ফুটপাতে অবস্থান নিয়ে পুলিশের অভিযানের সমালোচনা করেন। পরের দিন সকালেও তিনি নয়াপল্টনে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে বাধা দেয়।
গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর রাত পর্যন্ত ফখরুল দলীয় কার্যালয়ের সামনের ফুটপাতে অবস্থান নেন
সংঘর্ষের ঘটনায় ৪৭৩ জনের নাম উল্লেখসহ বিএনপির অজ্ঞাত দেড় থেকে দুই হাজার নেতা-কর্মীকে আসামি করে পল্টন মডেল থানায় মামলা করে পুলিশ। আরও দুটি মামলা হয় মতিঝিল ও শাহজাহানপুর থানায়।
৯ ডিসেম্বর সহিংসতার মামলায় বিএনপির দুই শীর্ষ নেতাকেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়।