চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুটি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচনের আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী কারা, এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়নি এখনও।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারির ভোট সামনে রেখে সেখানে ক্ষমতাসীন দল প্রার্থী মনোনয়ন দিলেও অন্য দলগুলো এখনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেনি। এই জেলায় বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীও ভীষণ শক্তিশালী। আর বিএনপির জোটে থেকেও কখনও সেখানে ছাড় দেয়নি জামায়াত। অন্য দলগুলোর অস্তিত্ব নামমাত্র, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসার মতো অবস্থানে নেই কেউ।
বিএনপি সংসদ থেকে আচমকা পদত্যাগ করার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও ৩ সংসদীয় আসন ফাঁকা হয়। নির্বাচনি নিয়ম অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় আগামী বৃহস্পতিবার ৫ জানুয়ারি।
সেখানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে মাহিয়া মাহি নৌকা প্রতীক চেয়ে শীতের রাজনীতিতে খানিকটা উত্তাপ ছড়িয়েছিলেন বটে, তবে আওয়ামী লীগ ভরসা রেখেছে গত নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী মু. জিয়াউর রহমানের ওপর।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ সদর আসনেও গত তিনবারের প্রার্থী আব্দুল ওদুদের বিকল্প দেখেনি দলটি। ১৯৯১ সালে এই আসনে ভোটের হিসাবে তলানিতে থাকা আওয়ামী লীগ প্রতিটি নির্বাচনে ভোট বাড়িয়ে ২০০৮ সালে ওদুদের হাত ধরেই প্রথমবারের মতো পায় জয়।
এখন প্রশ্ন হলো, ওদুদ ও জিয়াউরের লড়াই হবে কার সঙ্গে। অন্য কোনো দলের কেউ নাকি নিজ দলের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র- এ নিয়েই আছে আলোচনা।
অতীতে ভোটের হিসাব বিবেচনায় নিলে বলা যায়, যদি আওয়ামী লীগের কেউ নৌকার প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ করেন, তাহলেই ভোটে কিছুটা উত্তাপ দেখা যেতে পারে, নচেৎ নয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ দুটি আসনেই একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে জিয়াউর রহমান ছাড়াও রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার ও খুরশিদ আলম বাচ্চু আওয়ামী লীগ নেতা। নবিউল ইসলাম নামে ফরম তোলা অন্য জন কোনো দলের সঙ্গে জড়িত নন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম উঠিয়েছেন পাঁচজন। নৌকা পেতে যাওয়া আব্দুল ওদুদ ছাড়াও আছেন ও জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির এবং কামরুজ্জামান খান, তাহরিমা ও আমানুল হক, যাদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
১৪-দলীয় জোটের আসন ভাগাভাগির মাধ্যমে প্রার্থী ঘোষণা হওয়ায় শেষ পর্যন্ত সদর আসনে জাসদ ভোটের মাঠে থাকে কি না, সেটা নিয়েও আছে আলোচনা। দলটিকে বগুড়া-৪ আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির বিষয়টা এখনই খোলাসা করতে চান না। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা নিয়ে আমাদের দলীয় ফোরামে আলোচনা হচ্ছে। দেখি কী সিদ্ধান্ত হয়, সেটা পরে জানাব সবাইকে।’
জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির অবস্থান এই জেলায় খুবই দুর্বল। দলের জেলা শাখার হাল ধরা ছিল নজরুল ইসলাম মিয়া ও শাহজাহান আলীর ওপর। তারা ছিলেন যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তাদের মৃত্যুর পর দলের অবস্থান অনেকটাই নাজুক।
জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক নওশাদ আলী বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২ ও ৩ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে একাধিক প্রার্থী আবেদন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। তাদের সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়েছে দল থেকে। তবে এই দুই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী কে হবেন বা জাতীয় পার্টি নির্বাচনে থাকবে কি না, সেটা জানতে আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে, এখনো দল থেকে কোনো সিদ্ধান্তই হয়নি।’
ছেড়ে দেয়া আসনের উপনির্বাচন নিয়ে বিএনপির কোনো ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন দলটির জেলা শাখার আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া। তিনি বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলনের অংশ হিসেবেই তো বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করেছেন। এখন উপনির্বাচন নিয়ে তো বিএনপির কোনো চিন্তাভাবনা না থাকাই স্বাভাবিক, আমরা আমাদের দলের কর্মসূচি নিয়েই ব্যস্ত আছি।’