বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

২০১৩-র মতো সহিংসতা যেন আর না ঘটে, পুলিশকে প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ৩ জানুয়ারি, ২০২৩ ১২:১০

উচ্চ আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলোপের প্রতিবাদে ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনে যায় বিএনপি-জামায়াত জোট। ২০১৩ থেকে নির্বাচনের এক সপ্তাহ পর পর্যন্ত ব্যাপক সহিংসতা হয় দেশে। সেই নির্বাচনের এক বছর পূর্তির পর ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে ফের শুরু হয় সহিংসতা। বিএনপির আবার তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে ফিরে যাওয়ায় সেই আশঙ্কার কথা বলাবলি হচ্ছে ফের।

২০১৩-১৪ সালের মতো রাজনৈতিক সহিংসতা যেন দেশে আর তৈরি না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধিতার মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচনের আগের পরিস্থিতি ফেরার যে আশঙ্কার কথা বলাবলি হচ্ছে, সে সময় এমন বক্তব্য এলো সরকার প্রধানের তরফ থেকে।

মঙ্গলবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

যে কোনো পরিস্থিতিতে মানুষের জানমাল বাঁচাতে পুলিশের নিজের জীবনের ঝুঁকি নেয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটাই হচ্ছে পুলিশের সবচেয়ে বড় কাজ এবং এটা তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করে যাচ্ছে। তাই পুলিশ বাহিনীকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, অভিনন্দন জানাই।’

২০১৩-১৪ থেকে সালের শুরু পর্যন্ত এবং ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময় সহিংসতার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাণ্ডব ও অগ্নি সন্ত্রাস এবং এর ফলে হাজার হাজার মানুষ, প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়েছিল। প্রায় পাঁচ শর মতো মানুষ মৃত্যুবরণ করেন এই অগ্নিসন্ত্রাসের কারণে।

‘সেখানে পুলিশ বাহিনীও রেহাই পায়নি। তারাও মৃত্যুবরণ করে এবং আহত হয়। খুব নির্দয়ভাবে পুলিশকে এই জামায়াত-শিবির-বিএনপিরা যেভাবে হত্যা করেছে প্রকাশ্য দিবালোকে, এভাবে পুলিশে গায়ে কেউ হাত দেয়, এটা কিন্তু কখনও দেখা যায় না। কিন্তু এ ধরনের ঘটনাও বাংলাদেশে ঘটেছে।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, সেই আন্দোলনের সময় সাড়ে ৩ হাজার বাস-ট্রাক, ১৯টি ট্রেন লঞ্চ নষ্ট করে। সরকারি অফিসে আগুন দেয়া হয়।

তিনি বলেন, ‘পুলিশের সদস্যরা জীবনের বাজি রেখে এ সব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড রুখে দিয়ে জনগণের জানমাল নিরাপত্তা দিয়েছেন। দূর্ভাগ্য হলো, অগ্নিদগ্ধ হয়ে যারা বেঁচে আছেন, কারও চেহারা এত বিকৃত হয়ে গেছে.. এ ধরনের জঘন্য ঘটনা বাংলাদেশে যেন আর না ঘটে। আমি পুলিশ বাহিনী ও আইন শৃঙ্খলা সংস্থাকে ধন্যবাদ জানাই যে তারা এটা প্রতিহত করেছেন জনগণকে পাশে রেখে।’

পুলিশের এক সদস্যকে পদক পরিয়ে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

শঙ্কা কী কারণে

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে একটি রিট আবেদনের শুনানি শেষে ২০১১ সালের প্রথম প্রান্তিকে উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণার পর ওই বছর নির্বাচিত সরকারের অধীনে ভোটের ব্যবস্থা ফেরায় আওয়ামী লীগ সরকার।

এর প্রতিবাদে ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। সেই সঙ্গে সেই নির্বাচন বানচালে যায় আন্দোলনে। তবে বিরোধীদের বর্জনের মুখে একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় ফেরে আওয়ামী লীগ।

সেই নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের পুরোট এবং পরের বছর ভোট পরবর্তী এক সপ্তাহ ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত পরিস্থিতি ছিল সংঘাতময়। নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনে স্বাভাবিক জীবন ছিল বিঘ্নিত।

নির্বাচন হয়ে যাওয়ার এক সপ্তাহ পর বিরোধী জোট আন্দোলন প্রত্যাহার করলেও নির্বাচনের এক বছর পূর্তির দিন ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে আবার শুরু হয় হরতাল অবরোধ। ফেরে পেট্রল বোমা হামলাসহ নানা সহিংসতা। সেটি চলতে থাকে বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত। তবে এবার আর কর্মসূচি স্থগিত বা প্রত্যাহার হয়নি। তার আগেই ভেঙে পড়ে অবরোধ ও হরতাল।

একতরফা নির্বাচন করেছে জাতীয় পার্টি এবং বিএনপিও। তবে তাদের সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির সরকার দুই বছরের কিছু বেশি সময় এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটের পর বিএনপি সরকার টিকে থাকে অল্প কদিন।

তবে আওয়ামী লীগ সরকার মেয়াদ পূর্তি করে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন দেয়। সেই নির্বাচনের আগে আবার আন্দোলনের ঘোষণা দিলেও তাতে অংশ নেয় বিএনপি। ২০-দলীয় জোটের পাশাপাশি গড়ে তোলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে আরও একটি জোট।

তবে সেই নির্বাচনে আগের রাতেই ভোট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ এনে আবার তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ফিরে গেছে। আর আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধীদের এই দাবি নাকচ করে এমনকি আলোচনায় না বসার কথাও বলছে। তারা বলছে, উচ্চ আদালত এবং জাতীয় সংসদ- দুই জায়গাতেই তত্ত্বাবধায়কের বিষয়টির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। সেটি ফেরার আর ‍সুযোগ নেই।

২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে সরকারের তরফ থেকে বিএনপির প্রতি আলোচনার আহ্বান জানানো হলেও এবার আর সেটি হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, কারও নির্বাচনে আসা বা না আসা তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ২০১৪ সালের মতোই বিএনপি জাতীয় নির্বাচন বর্জন করলে আবার একতরফা নির্বাচন আয়োজনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। বলেছেন, কোনো দল নির্বাচনে না এলে সেটি তাদের দায়িত্ব না। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে কেউ ভোটে বাধা দিলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া। সেটি তারা করবেন।

অনুষ্ঠানে প্যারেড পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

পুলিশকে আস্থা ধরে রাখার তাগিদ

প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, পুলিশ তার কাজের মধ্য দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। সেটি ধরে রাখার তাগিদও দিয়েছেন তিনি।

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের সাফল্যের জন্য তাদের প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা বলেন, ‘জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস একটি বিশ্বব্যাপি সমস্যা। হলি আটিজানের ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পুলিশের অফিসাররা যে অবস্থায় ছিল, সেভাবে ছুটে গিয়েছিলেন এবং দুই জন জীবন দেন। আমরা এই জঙ্গির হাত থেকে রক্ষার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি।

‘পুলিশ বাহিনীকে আমি ধন্যবাদ জানাই, জঙ্গি-সন্ত্রাসী-মাদক চোরাচালানী বা মানব পাচারের বিরুদ্ধে তারা যথাযথ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের পুলিশ অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। আর এরজন্য পুলিশ বাহিনী, বিশেষ করে মহিলা কন্টিনজেন্ট ভূয়সী প্রশংসা পাচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জল হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পুলিশ বাহিনী এখন জনগণের পুলিশ হিসেবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আগে পুলিশের নাম শুনে মানুষ ভয় পেত, এখন জানে পুলিশ সেবা দেয়, তাদের পাশে দাঁড়ায়। মানুষের আস্থা অর্জন করা, জনগনের আস্থা অর্জন করা যে কোনো বাহিনীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন।

‘এই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই আপনারা মানুষের সেবা করে যাবেন। জনগনের মনে পুলিশের জন্য যে আস্থা তৈরি হয়েছে সেটা যেন অক্ষুণ্ন থাকে।’

কৃতিত্বপূর্ণ ভূমিকায় ১১৫ জনকে পদক

অনুষ্ঠানে ১১৫ পুলিশ কর্মকর্তাকে সদ্য বিদায়ী ২০২২ সালে পেশাগত কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

এর মধ্যে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৫ জন পুলিশ সদস্যকে বিপিএম ও ২৫ জনকে পিপিএম দেয়া হয়।

গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ২৫ জন পুলিশ সদস্যকে বিপিএম-সেবা এবং ৫০ জনকে পিপিএম-সেবা দেয়া হয়।

এ বিভাগের আরো খবর